‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গুম ও গুপ্তহত্যার শিকার ৬০ জন’

২০১৭ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে অপহরণ, গুম ও গুপ্তহত্যার ঘটনার শিকার হয়েছেন মোট ৬০ জন। এদের মধ্যে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার, আটজনকে গ্রেফতার ও সাতজন ফেরত আসলেও বাকিদের এখনো হদিস মেলেনি।

রোববার ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিস্থিতি-২০১৭’ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল করিম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, এ বছর বিভিন শ্রেণি-পেশার ৩১ জন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়। এদের মধ্যে পরবর্তীতে ৯ জন ফিরে আসে, ছয়জনকে গ্রেফতার দেখায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অধিকাংশ গুম ও গুপ্তহত্যার শিকার হওয়া ব্যক্তির পরিবার দাবি করে- তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়। প্রথমে তাদের ধরে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে তারা আটক দেখায়।

সংবাদ সম্মেলনে আসক আরও জানায়, ২০১৭ সালে বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে ক্রসফায়ার, গুলিবিনিময়ে ১২৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের কারণে ১২ জন, গ্রেফতারের আগে ও পরে গুলিতে ১৮ জন, গ্রেফতারের পর আত্মহত্যার শিকার একজন এবং অসুস্থ অবস্থায় চারজন, রহস্যজনকভাবে একজন মারা যান। এছাড়াও ২০১৭ সালে কারা হেফাজতে মারা যান ৬৩ জন, যার মধ্যে হাজতি ৩৩ জন এবং কয়েদি ২০ জন।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য র্যাব হেফাজতে কুর্মিটোলায় হানিফ মৃধার মৃত্যু। এ বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তাকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে আটক করা হয়। পরে তাকে রাজধানীর রায়েরবাজারে নিয়ে দুটি বেসরকারি ব্যাংকের চেকে স্বাক্ষর নেয়া হয়। ১৭ মার্চ আশকোনা এলাকা থেকে তাকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার দেখায় র্যাব। পরদিন ১৮ মার্চ কুর্মিটোলা হাসপাতালে রহস্যজনক মৃত্যু হয় তার। হানিফের নিখোঁজের বিষয়ে ৪ মার্চ সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছিল পরিবার।

আইন ও সালিস কেন্দ্র এ ধরনের গুম-গুপ্তহত্যাসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে। চলতি বছর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে আসক জানায়, চলতি বছর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিলে গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল সোচ্চার থাকলেও এই ধারার অপপ্রয়োগ অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে প্রস্তাবিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও’ ৫৭ ধারার সমরূপ বিধান রাখা হয়েছে, যার ফলে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে আসক জানায়, ২০১৭ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ২১২টি প্রতিমা, ৪৫টি বাড়িঘর ও ২১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে যা খুবই উদ্বেগজনক।

এছাড়াও ২০১৭ সালে এক হাজার ৬৭৫ শিশু হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়। এদের মধ্যে হত্যা ৩৩৯ জন, আত্মহত্যা ১১৭ জন এবং রহস্যজনক মৃত্যু হয় ৩৭ শিশুর। পাশাপাশি ৫৬৫ জন মেয়ে শিশু যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও উত্ত্যক্তকরণের ঘটনা ঘটেছে।