রিমন খুনে তিন কারণ, আসামির খোঁজে ডিবি

নিখোঁজের একদিন পর রাজধানীর শুক্রাবাদ এলাকা থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল হাসান রিমনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের পর আত্মহত্যা বলা হলেও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন হত্যা। রিমনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দায়িত্বপ্রাপ্ত গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্তে উঠে এসেছে।

কারা খুন করতে পারে তা এখনও নিশ্চিত না হলেও সম্ভাব্য তিনটি কারণ সামনে রেখে তদন্ত চলছে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদও করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সবকিছু আমলে নিয়েই হত্যাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। নিহত রিমনের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা কাকলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রনি নামে রিমনের ভাগ্নেকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

ঘটনার পর পরিবারের সদস্যরা জানান, স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স সংক্রান্ত বিষয় ও ফ্ল্যাট সংক্রান্ত ঝামেলার কারণে পরিকল্পিত হত্যার শিকার হতে পারেন রিমন। তবে শ্বশুর বাড়ির লোকজন মনে করছেন, ‘মাদকাসক্ত’ রিমনের বন্ধু সম্পর্কিত কেউ তাকে হত্যা করতে পারে।

পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল হাসান রিমন (৪২) দুই মাস আগে দেশে আসেন। বিজয় দিবসে দুই সন্তানকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। এরপর সন্তানদের তাদের মায়ের কাছে পৌঁছে দিয়ে বেরিয়ে এসেই নিখোঁজ হন। পরদিন ১৭ ডিসেম্বর রাতে শুক্রাবাদে নির্মাণাধীন ভবনের নিচতলা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় রিমনের ভাগ্নে রনিকে এজাহারভুক্ত আসামি করে নিউমার্কেট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা খলিল উল্লাহ। নিহতের পরিবার জানায়, আগারগাঁও শাপলা হাউজিংয়ে একটি ফ্ল্যাট কেনেন রিমন। নিজে বিদেশে থাকায় রিমন সেটিতে রনিকে থাকতে দেন। রিমন দেশে ফিরে ফ্ল্যাটটি ফেরত চাইলে রনি টালবাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে রনি রিমনকে হুমকিও দেয়।

পল্টন থানার একটি অস্ত্র মামলায় ছয় বছর জেল খেটে সম্প্রতি রনি ছাড়া পায় বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। নিউমার্কেট থানার ওসি আতিকুর রহমান জানান, মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি দক্ষিণ) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দক্ষিণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, রনিকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে রনি ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। তবে ফ্ল্যাট নিয়ে রিমনের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করেছে।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্মাণাধীন ওই ভবনের দারোয়ান রফিকুল ইসলাম, সোহেল ও শাহাবুদ্দিন শাহীনকে আটক করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রিমনের সাবেক স্ত্রী কানিজ ফাতেমাসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনকেও ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মো. শহীদুল্লাহ বলেন, আমরা তিনটি কারণ সামনে রেখে তদন্ত করছি। এটা স্পষ্ট রিমন আত্মহত্যা করেনি, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের শিগগিরই গ্রেফতার করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

ডিবি দক্ষিণ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, আগারগাঁওয়ের একটি ফ্ল্যাট নিয়ে রনির সঙ্গে রিমনের দ্বন্দ্ব ছিল। এ কারণে রিমন হত্যাকাণ্ডের প্রধান সন্দেহভাজন রনি। হত্যার নেপথ্যে অন্য কারণও থাকতে পারে। বিশেষ করে স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির জের। এছাড়া রিমনের অবৈধ কোনো সম্পর্ক ছিল না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, রিমনের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের জয়পুর পুরানবাড়িতে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে তিনি দেশের বাইরে লেখাপড়া করেন। রিমন গত ১৬ ডিসেম্বর শনিবার ছোট বোন লিজার উত্তরার ১৭ নম্বর রোডের বাসা থেকে নিজের দুই সন্তানকে নিয়ে ৬৮ সাইন্স ল্যাবরেটরি রোডে তার সাবেক শ্বশুর বাড়িতে আসেন। তবে বাসায় না ঢুকে ছেলে রাফাত হাসান (১০) ও মেয়ে রাইসা হাসানকে (৪) বন্ধু রিপনের মাধ্যমে সাবেক স্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেন। পরে রিপনের সঙ্গে এলিফ্যান্ট রোডের মালঞ্চ রেস্টুরেন্টে নাশতা করে তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিউমার্কেটের উদ্দেশে রওনা দেন। সেই থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ছেলের খোঁজ না পেয়ে বাবা খলিল উল্লাহ নিউমার্কেট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

পরদিন রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে শুক্রাবাদে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবনের নিচতলা থেকে রিমনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রিমনের বন্ধু জসিম উদ্দিন ও রিপন মরদেহ শনাক্ত করেন।