মেয়ে হারানোর বেদনাই কী মেয়রকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল?

চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের মৃত্যুর খবরে কানাডা প্রবাসী সাবেক সংবাদকর্মী ইমাম উদ্দিন একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন।‘মেয়ে হারানোর বেদনাই কি মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল?’

মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুর খবরটা অত্যন্ত বেদনার। মেয়েকে চট্টগ্রামের বাওয়া স্কুল থেকে নিতে আসতেন তিনি। আমি যেতাম আমার ভাইয়ের মেয়ে সানিলাকে আনতে। সম্ভবত ১৯৯১-৯২ সালের দিকে। তখন এই জনপ্রিয় নেতাকে একদম কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। প্রতিদিন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতেন একজন স্নেহময়ী পিতা তার কন্যার জন্য। আর আমি ভাতিজীর জন্য। কী যে আদর করতেন এই মেয়েকে তা আগে খুব একটা বোঝা না গেলেও মৃত্যুর পরতো সবাই দেখেছে। আসলে মেয়ে হারানোর বেদনাই কী মেয়রকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল?

টুম্পার মৃত্যুর সময় তিনি পাশে থাকতে পারলেন না। ২০০৭ সালের ৭ মার্চ এই জনপ্রিয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। একুশ মাস বিনা বিচারে কাটাতে হয় কারাগারে। ক্যান্সারে আক্রান্ত মেয়ে তার পিতাকে মৃত্যুর আগে দেখে যেতে পারেন নি। আর পিতা মহিউদ্দিন চৌধুরীও দেখতে পারলেন না তার অতি আদরের মেয়ে ফৌজিয়া সুলতানা টুম্পাকে । কী নির্মম ঘটনা। স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন ও বড় ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে নিয়ে ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৭ অক্টোবর ব্যাংকক রওনা হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বসেই টুম্পার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

২০০৮ সালের ১৭ অক্টোবর প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী টুম্পা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এক-এগারো পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তখন মহিউদ্দিন ছিলেন কারাগারে। মেয়ের মৃত্যুর সময় পিতা হিসেবে তার শিয়রে থাকতে না পারার মানসিক যন্ত্রণার কথা সবসময় বলতেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।

মৃত্যুর আগে জননেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীকে তাঁর মেয়ে লিখেছিলেন,‘আমি কখনো তোমাকে বলতে পারিনি, তুমি আমার  কাছে কী! তোমার কাছে কোনো দিন মনের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারিনি। শুধু এটুকু বলতে পারি, যখন এ চিঠি লিখছি, আমার চোখ ছাপিয়ে পানি নামছে। আমি তো কখনো তোমাকে বলতে পারিনি তুমি শ্রেষ্ঠ বাবা, তুমি আমার আদর্শ।’

‘আব্বু, তোমাকে কি একটা প্রশ্ন করতে পারি? তুমি তো আল্লাহকে বিশ্বাস করো। একজন ভালো মানুষের সব গুণ তোমার মধ্যে আছে। তোমার ঈশ্বর কি সেটা দেখছেন না? তিনি কি দেখছেন না তুমি কী কষ্ট পাচ্ছ? এত কিছুর পর আমি কি আল্লাহর ওপর আস্থা রাখব? কিন্তু আমি রাখছি।

‘সেই সকালবেলাগুলো আজ খুব মিস করছি, যখন তুমি খুব ভোরবেলা উঠে ছড়া আবৃত্তি করতে…। আব্বু, তোমাকে আজ হাজারবার ডাকতে ইচ্ছা করছে…চিৎকার করে তোমাকে ডাকতে ইচ্ছা করছে।’ ‘লবণাক্ত অশ্রুর বিন্দু ছাড়া আমি আর তোমাকে কী দিতে পারি? যে কাগজটাতে লিখছি, সেটা আমি আর দেখতে পাচ্ছি না। আমার চোখের পানিতে কাগজটা ভিজে যাচ্ছে।’ ‘তুমি আমার হৃদয়ের সবচেয়ে গভীরতম স্থানটিতে আছ, চিরকাল সেখানেই তুমি থাকবে। —তোমার টুম্পা।’

মহিউদ্দিন চৌধুরীর জীবন ও রাজনীতি নিয়ে সাংবাদিক মোয়াজ্জেমুল হক স্বপ্নের ফেরিওয়ালা নামের একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাতে তিনি এ কথাটি লিখেছেন।