পুলিশের হেফাজতে মুসলিম হত্যার সন্দেহভাজন শম্ভুলাল!
ভারতের রাজস্থান রাজ্যে একজন মুসলিম দিনমজুরকে কুপিয়ে হত্যা ও পরে তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দেবার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পুলিশ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। হত্যার দায়ে সন্দেহভাজন শম্ভুলাল এখন পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
রাজস্থানের আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অতিরিক্ত মহানির্দেশক এন রবীন্দ্র কুমার রেড্ডি ভট্টশালীকে জানিয়েছেন আজ বৃহস্পতিবার উদয়পুর শহরে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে কিছু লোক মিছিল বার করার চেষ্টা করেছিল। ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় তাদের বাধা দেওয়া হয়। পুলিশের ওপরে তারা পাথর ছুঁড়তে শুরু করলে পাল্টা লাঠি চালানো হয়। অন্তত ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে ঘটনাস্থল থেকে। স্থানীয় সূত্রগুলি বলছে কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সমর্থকরাই ওই মিছিল বার করার চেষ্টা করছিল।

গত কয়েকদিন ধরে এই মিছিলের সমর্থনে সামাজিক মাধ্যমে বার্তাও দেওয়া হচ্ছিল। তারা একদিকে মুহম্মদ আফরাজুলের হত্যাকারী শম্ভুলাল রৈগরের সমর্থনে আর কথিত ‘লাভ-জিহাদ’এর বিপক্ষে জনমত সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। মি. রেড্ডি জানিয়েছেন, রাজসমুন্দ, উদয়পুর আর জয়পুর শহর থেকে মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, যারা সামাজিক মাধ্যমে ধর্মীয় কুৎসা ও হিংসা ছড়ানোর বার্তা দিচ্ছিল। উদয়পুর আর রাজসমুন্দ জেলায় ১৪৪ ধারা অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।
পুলিশ বলছে, শম্ভুলালের স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার আগে পর্যন্ত সেখানে প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার রুপি জমা পড়েছে।

মি: লালের বিরুদ্ধে একজন মুসলিমকে কুপিয়ে হত্যার এবং তারপর ওই হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবার অভিযোগ আনা হয়। রাজস্থানের রাজসমুন্দ জেলায় যেখানে মুহম্মদ আফরাজুল নামে ওই মধ্যবয়সী মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল, সেখানকার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা আনন্দ্ শ্রীবাস্তবা বিবিসিকে বলেছেন “হত্যার ঘটনা নিয়ে আমাদের তদন্তের কারণে” ওই অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন মি: লাল ও তার পরিবারের জন্য অর্থসাহায্য চেয়ে প্রচার চালানোর দায়ে গ্রেপ্তার এক ব্যক্তি উপ্দেশ রানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ”উস্কানিমূলক মন্তব্য” পোস্ট করেছে। নিহত মুহম্মদ আফরাজুল পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজস্থানে কাজ করতে যাওয়া একজন শ্রমিক এবং এক যুগের বেশি তিনি রাজস্থানেরই বাসিন্দা ছিলেন।
হত্যার পর পোস্ট করা দ্বিতীয় আরেকটি ভিডিওতে মি: লালকে দেখা গেছে কার্যত ওই ঘটনার সমর্থনে এই যুক্তি দিতে যে তিনি ”মুসলিমদের হাত থেকে হিন্দুদের সম্মানরক্ষার খাতিরে” এ কাজ করেছেন। মি: লাল মুসলমানদের উদ্দেশ্যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন : ”আমাদের দেশে ‘লাভ জিহাদ’ যদি করতে যান আপনার এই পরিণতি হবে।”
ভারতের ক্ষুদ্র কয়েকটি কট্টর হিন্দু গোষ্ঠির প্রচারণায় এই ‘লাভ জিহাদ’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই গোষ্ঠিগুলো মুসলমানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে যে তারা ”হিন্দু নারীদের ভুলিয়ে ভালিয়ে তাদের নিজেদের ধর্ম থেকে সরিয়ে আনার ষড়যন্ত্রে” লিপ্ত রয়েছে।