পিইসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ভুল, গণমাধ্যম জুড়ে সমালোচনা

পিইসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ব্যাপক ভুল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা। সমালোচনা চলছে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। মঙ্গলবার সিলেট বোর্ডের ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্নপত্রের এই ভুলগুলো এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক ফেইসবুকে দিলে তা ভাইরাল হয়ে যায়।

প্রশ্নপত্রটির ৫০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের মধ্যে ৪০টিতেই ভাষা ও ব্যাকরণগত ভুল রয়েছে। এগুলোসহ পুরো প্রশ্নপত্রে ভুলের সংখ্যা অর্ধ শতাধিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সামসাদ মর্তূজা বলেন, “আমি ফেইসবুকে প্রশ্নপত্রটি দেখেছি, ভুল ছাড়া কোনো বাক্য চোখে পড়েনি। আমি শকড।

“এই প্রশ্নগুলো যে বা যারা করেন, তাদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে আমার, আমি মনে করি না, তারা শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।”

প্রশ্নপত্রে ভুলের পেছনে বোর্ডের শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলার দিকে ইঙ্গিত করেছেন ঢাকার শহীদ বীরউত্তম লেফটেন্যান্ট আনোয়ার গার্লস কলেজের ইংরেজির শিক্ষিক ফারজানা নাসরিন।

তিনি বলেন, “আমরা যখন স্কুলের ভেতরের পরীক্ষার জন্য প্রশ্ন করি, তাও কয়েকবার চেক করি ভুল-ত্রুটি সংশোধনের জন্য। অথচ বোর্ডের প্রশ্নে এত ভুল কীভাবে রয়ে গেল? নিশ্চয়ই প্রশ্ন করার পর চেক করে দেখা হয়নি।”

‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’ বিষয়ের ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্নপত্রে ভুল থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তার জন্য জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিকে দায়ী করেছেন সিলেটের জেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “প্রশ্ন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি তৈরি করে থাকে। আমরা যে প্রশ্ন পাই, সেটাই কেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করি। প্রশ্নে ভুল আছে কী নেই, সেটা দেখা আমাদের দায়িত্বের ভেতর পরে না।”

প্রাথমিক সমাপনীতে কয়েকটি সেটে পরীক্ষা নেওয়া হয়। সিলেট বোর্ডে যে সেটে এই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে অন্য বোর্ডের প্রশ্নপত্রের মিল নেই।

প্রাথমিক সমাপনীতে এই শিক্ষার্থীরা ঢাকার; সিলেটে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্রে পাওয়া গেছে ভুল

সিলেটে ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’ বিষয়ে ইংরেজি ভার্সনের এই প্রশ্নপত্রে ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছেন বলে জানান জেলার কর্মকর্তা আমিরুল।

প্রশ্নপত্রে এই ভুলের বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. রমজান আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোনে তাদের পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান ও অতিরিক্ত সচিব এ এফ এম মঞ্জুর কাদিরও ফোন ধরেননি।

ভুলের ছড়াছড়ি

বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি পরীক্ষার এক নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে– ‘What would happen if no the Mujibnagar govt. was formed?’ শুদ্ধ বাক্যটি হবে– ‘What would happen if the Mujibnagar govt. was not formed?’।

বহুনির্বাচনীটির উত্তরেও বাক্যের ব্যাকরণেও ভুল পাওয়া যায়, d উত্তরে বলা হয়েছে-  It wouldn’t be possible to train of freedom fighter, এখানে of এর স্থলে to হবে।

২ নং প্রশ্নে বলা হয়েছে– ‘Why Bangladesh to import a lot of vegetable oil?’, এই প্রশ্নটিতে ‘to’ বসার কথা নয়। এর ‘b’ নং উত্তরেও ভুল বাক্য রয়েছে। বলা হয়েছ, ‘Because, Production is low than demand.’, সঠিক বাক্যটি হবে– ‘Because, Production is lower than demand.’।

৩ নং প্রশ্নে বলা হয়েছে– ‘Why was built 177 secret room at Sompur Bihar in Paharpur?’ এই পুরো বাক্যটিই ভুল।

প্রশ্নপত্রের ভুল নিয়ে সমালোচনা ফেইসবুকে

৪ নং প্রশ্নে বলা হয়েছে- ‘What is happened in the people of this country as a result of ‘divide and rule’ policy of British? বাক্যটিতে what এরপর is হবে না এবং in এর স্থলে to হবে।

৫ নং প্রশ্নের ‘c’ অপশনে লেখা হয়েছে ‘Men became torture’ । এখানে বাক্যই ভুল।

৮ নং প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘Why did the floting people of city pass their life in humanly?’  এই প্রশ্নের বাক্যে ব্যাকরণগত ও বিশেষণে ভুল ।

১০ নং প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘What is the major cause of Bangladesh facing natural climates?’ ; এখানে climate ভুলভাবে ব্যবহার হয়েছে।

এরকম অন্তত ৪০টি ই ভুল পাওয়া যায় বহুনির্বাচনী প্রশ্নপত্রে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের 2 (c)  তে লেখা রয়েছে ‘Why did the intellectuals kill?’ প্রশ্নের ব্যাকরণে ভুল থাকার পাশাপাশি বাক্যের ভাবও বোঝা যাচ্ছে না। ভুল রয়েছে 2(c), 2(h), 2(i), 2(m), 2(0), 3 (d), 3 (f) ও 3 (h) নং প্রশ্নে।

ভাষা ব্যবহার, ব্যাকরণগতের সঙ্গে তথ্যগত ভুলও রয়েছে নানা প্রশ্নে।

সমালোচনার ঝড়

মঙ্গলবার সিলেটের মাসুদ চৌধুরী নামের এক অভিভাবক ফেইসবুক পোস্টে পিইসির ভুল প্রশ্নপত্রটি দিলে তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় চলছে।

মাসুদ তার পোস্টে লিখেছেন, “আমার মেয়েটা আজ পিএসসি পরীক্ষা দিয়ে আসলো। তার প্রশ্নপত্র দেখে আমি হতবাক। কষ্ট করে শুধুমাত্র প্রশ্নগুলো পড়ুন। উত্তর পড়ার দরকার নাই। চিন্তাও করা যায় না, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রশ্নকর্তারা ক্লাস ফাইভের একটা প্রশ্ন ইংরেজিতে করতে পারেন না। আর আমাদের শিক্ষামন্ত্রী গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন, লেখাপড়ার মান অনেক বৃদ্ধি পাইছে।’

পোস্টে সোহেলি শায়লা নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছি। লজ্জাজনক।’

ভুল প্রশ্নপত্রের সমালোচনা ফেইসবুকে

জাকারিয়া হাবিব নামের একজন ফেইসবুক লিখেছেন, ‘২০০ বছর ইংরেজি শেখার পর পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষার বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের ইংলিশ ভার্সনের প্রশ্নপত্রের এই দৈন্য দশা !!! এই পরীক্ষার প্রশ্ন প্রস্তুতকারী, নিরীক্ষক সর্বোপরি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমার আন্তরিক অভিনন্দন !!! কারণ সবাই মিলে অনেক পরিশ্রম না করলে একটা মাত্র প্রশ্নপত্রে এতগুলো ভুল করা সম্ভব না।

“সবার কাছে বোধগম্য হবে না, তাই প্রশ্নের মানের বিষয়টা আলোচনার বাইরেই রাখলাম। ন্যুনতম ইংরেজির জ্ঞান সম্পন্ন মানুষও ভুলগুলো বুঝতে পারবেন।

“এখন প্রশ্ন হলো, এর দায়িত্ব নেবে কে? বানান আর ব্যাকরণের ভুল থেকে একজন সুস্থ মস্তিষ্কের শিক্ষিত মানুষকেই হিমশিম খেতে হয় প্রশ্নে কি চাওয়া হয়েছে তা বুঝতে। তাহলে এই কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা যদি প্রশ্ন না বোঝার কারণে ভুল করে থাকে তাহলে তার দায় কার ওপর বর্তায়?????”