পিএসসি’তে পাঁচ বছর থেকে একই পরীক্ষার্থী, আছে বই বিক্রিরও অভিযোগ

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ফতেখাঁ কারামতিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ৫ বছর ধরে একই শিক্ষার্থী দিয়ে ৫ম শ্রেণীর পিএসসি পরীক্ষা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাড়াটে পরীক্ষার্থীদের দিয়ে চলছে জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষা।

জানা গেছে, উপজেলার ঘড়িয়াল ডাঁঙ্গা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পল্লীতে অবস্থিত ফতেখাঁ কারামতিয়া দাখিল মাদ্রাসাটিতে নিয়মিত মান সম্মত পাঠদানের অভাবে প্রতিবছর শিক্ষার্থী কমতে থাকে।

রবিবার (১৯ নভেম্বর) শিক্ষার্থী না থাকায় পরীক্ষার ১ম দিনে ৫ম শ্রেণীর পিএসসি পরীক্ষায় উক্ত মাদ্রাসা থেকে ২০১৩ ও ২০১৬ সনের পিএসপি পরীক্ষার্থী আঃ রহমান, ২০১৫ইং সনের পিএসসি পরীক্ষার্থী মোকছেদুল এবং মাসুদ রানাকে পূনঃরায় পিএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে এলাকার জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ফতেখাঁ কারামতিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে এনামুল হক, সাজাহান, সাজিদা, আমিনা, মোখছেদুল, মাসুদ রানা, শাহিন আলম, লতিফ, আরিফা ও মোছলেহা নামের ১০ জন পরীক্ষার্থী একাধিকবার করে ২০১৩ইং থেকে ২০১৭ইং পর্যন্ত পিএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের রেকর্ড পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, গত কয়েক বছর ধরে পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট উপজেলা সদরের তিস্তা গ্রামে অবস্থিত ফাতেমা তুজ-জোহরা সহ আশে পাশের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়া করা শিক্ষার্থী এনে ফতেখাঁ মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী হিসেবে রেজিষ্ট্রেশন ও ফরম পূরনের মাধ্যমে তাদেরকে দিয়ে জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করা হয়।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও মন্ত্রনালয়ের শর্তানুযায়ী এবতেদায়ী থেকে দাখিল পর্যন্ত কমপক্ষে ২শ ৫০জন শিক্ষার্থী থাকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় শর্ত পূরন করতে কাগজে কলমে ভূয়া শিক্ষার্থীর নাম অন্তর্ভূক্ত করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে অতিরিক্ত পাঠ্য পুস্তক উত্তোলন করা হতো।

ইতোপূর্বে উক্ত মাদ্রাসার ৯ বস্তা সরকারী পাঠ্যপুস্তক বাজারে বিক্রির প্রাক্কালে পুলিশ খবর পেয়ে ওই মাদ্রাসার অফিস সহকারী এনামুল হকের ভাই আঃ ছালামের বাড়ি থেকে বই জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে। মাদ্রাসা সুপারের বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এলাকাবাসী, ফলে জনরোষ এড়াতে প্রায় ৪মাস যাবত মাদ্রাসায় অনুপস্থিত রয়েছেন সুপার গোলাম রব্বানী । ফলে বর্তমানে মাদ্রাসাটির শিক্ষা কাঠামো পুরোপুরী ভেঙ্গে পড়েছে।

সরেজমিন ফতেখাঁ কারামতিয়া দাখিল মাদ্রাসায় গিয়ে সুপারকে উপস্থিত পাওয়া যায়নি। পুরো মাদ্রাসা মিলে মাত্র ৩৮জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

মাদ্রাসার সাবেক দাতা সদস্য সুরুজ্জামান জানান, মাদ্রাসা সুপার গোলাম রব্বানী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে শিক্ষার্থীর ভূয়া তথ্য প্রদানের মাধ্যমে অতিরিক্ত পাঠ্যপুস্তক উত্তোলন করে পরবর্তীতে বাজারে বিক্রি করে আসছেন। এবারে ধরা পড়ার পরও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষ রহস্য জনক কারনে কোন মামলা করেননি।

এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ জানান, মাদ্রাসা সুপার দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত সহ তার বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি।

এবিষয়ে তিস্তা ফাতেমা-তুজ-জোহরা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওঃ মোঃ মুজিবর রহমান জানান, চলতি জেডিসি পরীক্ষায় প্রতি শিক্ষার্থী ৫শ টাকা হিসেবে তার মাদ্রাসার ৬ জন শিক্ষার্থী এবং আসন্ন দাখিল পরীক্ষার জন্য প্রতি শিক্ষার্থী ১হাজার টাকা হিসেবে ৮জন শিক্ষার্থী ফতেখাঁ কারামতিয়া দাখিল মাদ্রাসায় দেয়া হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি ফতেখাঁ মাদ্রাসার জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় শিক্ষার্থী দিয়ে সহযোগীতার কথা স্বীকার করেন।

ফতেখাঁ কারামতিয়া দাখিল মাদ্রাসা সুপার গোলাম রব্বানীর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পিএসসিতে মাত্র ৩জন পরীক্ষার্থী পূনঃরায় পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করছে, এছাড়া জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় আমাদের পরীক্ষার্থীর সাথে ফাতেমা-তুজ-জোহরার দু, তিনজন করে পরীক্ষার্থী রয়েছে।

পিএসসি পরীক্ষা দেখ ভালের দায়িত্বে নিয়োজিত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতিকুল রহমান জানান,উক্ত মাদ্রাসায় ৫ম শ্রেনীর একই শিক্ষার্থীদের দিয়ে একাধিকবার পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফ-উজ-জামান জানান, ইতোপূর্বে উক্ত মাদ্রাসায় গিয়ে সুপারকে না পেয়ে হাজিরা খাতায় ৭দিন অনুপস্থিত করেছি।

কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার মো: আলাউদ্দীন আল-আজাদ জানান, সুপারের অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

মোঃ মনিরুজ্জামান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি