চট্টগ্রামে চলন্ত বাসে তরুণীকে ধর্ষণ, ফাঁসি দাবিতে মানববন্ধন
চট্টগ্রামে চলন্ত বাসে এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত বাস চালক ও তার সহকারির ফাঁসি ও সড়ক পরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এই কর্মসূচি পালন করেছে চট্টগ্রাম ফাইট ফর উইমেন’স রাইট।
মানববন্ধনে ফাইট ফর উইমেন’স রাইট এর সভাপতি অ্যাডভোকেট রেহানা বেগম রানু বক্তব্যের শুরুতে প্রশ্ন রাখেন- সড়ক পরিবহনে এ কেমন পৈশাচিকতা? তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে গণপরিবহনে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ পর্যন্ত সারাদেশে চলন্ত বাসে ৯টি ধর্ষণের ঘটনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এধরনের আরো অনেক ঘটনা অপ্রকাশিত থেকে গেছে। সর্বশেষ চট্টগ্রামে একজন পোশাক শ্রমিক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কালকে আপনার মেয়ে হতে পারে, বোন হতে পারে। প্রত্যেকেরই মা, বোন, মেয়ে আছে। তাই এই পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে আমাদের প্রত্যেকের তীব্র প্রতিবাদ করা উচিত। সমস্বরে আওয়াজ তোলা উচিত।
তিনি বলেন, পুলিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করেছে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। এই নরপিশাচদের ফাঁসি চাই আমরা। তাদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত না হলে মেয়েরা চাকরি করতে ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস হারাবে।
পরিবেশ আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, উন্নত দেশের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। উন্নয়ন কাজে নারী-পুরুষ এখন সমানভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছে। দেশে শিক্ষার হার, গড় আয়ু বেড়েছে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে নারীদের প্রতি বর্বরতা, পৈশাচিকতা হলে দেশ অবশ্যই পিছিয়ে যাবে। সমতার চর্চা ব্যাহত হবে। তাই খুব কম সময়ের মধ্যে দোষীদের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ফাইট ফর উইমেন রাইটস-এর সহ সভাপতি দেওয়ান মাকসুদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ফাইট ফর ওমেন’স রাইট এর সহ সভাপতি আলেয়া নূর, প্রতিধ্বনি ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাতা মোর্শেদুর রহমান নয়ন, বাঁশখালী মানবাধিকার কমিশন সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আরিফ, পূর্বাশার আলো’র সভাপতি নোমান উল্লাহ বাহার ও সংগঠক ওয়াজেদ উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রসঙ্গত গত ২৭ অক্টোবর ছুটির দিনে তিন বান্ধবীকে নিয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে গিয়েছিলেন এক পোশাককর্মী। সন্ধ্যার পর বাসে করে তারা ফিরছিলেন। পতেঙ্গা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় অন্য যাত্রীদের সঙ্গে তার তিন বান্ধবীও বাস থেকে নেমে যান। রাত তখন সাড়ে আটটা। বাসে একা ওই তরুণী। তিনি যাবেন আরও দুই কিলোমিটার দূরে চান্দগাঁওয়ের মৌলভীপুকুর পাড় এলাকায়।
বহদ্দারহাটে যাত্রী নামিয়ে বাসটি আবার চলা শুরু করার পরই চালকের সহকারী সব জানালা বন্ধ করে দরজাও আটকে দেন। রাস্তায় তখন স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে অন্য গাড়ি। হঠাৎ ছোরা নিয়ে এসে বাসের একমাত্র যাত্রী ওই তরুণীকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেন চালকের সহকারী। এরপর ওই সহকারী চালকের আসনে বসেন। আর চালক উঠে এসে ধর্ষণ করেন তরুণীকে।
পরে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও থানায় দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন তিনি। পরদিন ওই বাসের চালক রাশেদুল ইসলাম (২০) ও সহকারী ইমতিয়াজ উদ্দিনকে (১৮) গ্রেফতার করে পুলিশ। ৪ নভেম্বর অপরাধ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন বাসচালক ও সহকারী।