ল্যাবএইডের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ভুয়া চিকিৎসার অভিযোগ

গ্রাহকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ নেওয়ার অভিযোগে ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীমকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের পর তার বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসছে একের পর এক অপকর্মের দলিল। ভুয়া চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সুদূর ইতালি থেকে ল্যাবএইডে চিকিৎসাধীন নিজ মায়ের অপচিকিৎসা ও মৃত্যুর অপ্রকাশিত তথ্য তুলে ধরেছেন তনয়া সুলতান বুশরা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে বুশরা বলেন, ‘২০১২ সাল জানুয়ারি মাস তারিখটা ঠিক মনে নেই। আম্মুর  টিউমার হয়। তখন আমরা ঢাকায় গুলশান এলাকায় থাকতাম। আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। আম্মুকে নিয়ে যাওয়া হয় ল্যাবএইড হাসপাতালে। সেখানে অপারেশন হয় আম্মুর। অপারেশন হওয়ার ১ সপ্তাহ পরেই সমস্যার সম্মুখীন হয়। যে জায়গায় অপারেশন হয়েছিলো সেখান থেকে ব্লাড পড়তে থাকে।’

‘পুনরায় আম্মুকে ল্যাবএইডেই নিয়ে যাই। তাদের কাছে নিয়ে গেলে তারা জানায়, তারা আন্তরিক দুঃখিত যে প্রথমবারের অপারেশন সাকসেসফুল হয়নি। তাই আবার অপারেশন করতে হবে। এনিয়ে আমার পরিবারের বড়রা ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে, একপ্রকার চাপের মুখে এসে দ্বিতীয়বার অপারেশনের জন্য ২০ শতাংশ টাকা কম নেয়ার মাধ্যমে সমঝোতায় আসে। তবে দুর্ভাগ্য এই যে, দ্বিতীয়বার অপারেশনের পরও সমাধান পাইনি। দুদিন যেতেই পুনরায় সেই জায়গা থেকে ব্লাড পড়া শুরু করে।’

‘ডায়াবেটিস ও আরো নানা সমস্যার কারণে ১৫দিন পর বিভিন্ন ডাক্তার দেখিয়ে আবারো ল্যাব এইডে নিয়ে যাই। যেখানে টিউমার ছিল ওইখান থেকে মাংস কেটে নিয়েছে এবং সাথে আরো কিছু পরীক্ষা করায়। তিনদিন পর রিপোর্ট আসল আম্মুর ক্যান্সার। বাট পরপর দুবার একি জায়গায় অপারেশনের পর ১৫ দিনের মাথায় ক্যান্সার হয়ে গেলো এটা খুব হাস্যকর লাগে না? কিভাবে ১৫ দিনের মধ্যে কারো ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে! তা ছাড়া একি রোগিকে একাধিকবার অপারেশন করার হেনস্তা আমরা ল্যাবএইডের কাছে আশা করি না। পরবর্তীতে আর ল্যাবএইডে নিয়ে যাওয়া হয়নি, তবে নানা ভুগান্তির পর ১১ জুন আমার আম্মু মারা যান।’

প্রসঙ্গত, (বুশরার নিরাপত্তার স্বার্থে তার সম্পূর্ণ পরিচয় ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়নি উক্ত সংবাদে)

এদিকে ল্যাবএইড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ল্যাবএইড প্রপার্টিজ গ্রাহকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ নিয়ে তা এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর এবং সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ দেশ-বিদেশে একাধিক ভবন কিনেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ডা. এ এম শামীমের বিরুদ্ধে। এসকল অভিযোগের ভিত্তিতে ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে গত বৃহস্পতিবার প্রায় দেড় ঘণ্টা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এছাড়া রোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা আদায় ও গ্রুপের বিভিন্ন মেশিনারিজ বিভিন্ন ব্যাংকে বন্ধক দেখিয়ে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ নেওয়াসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে ল্যাবএইড এমডি ডা. শামীমের বিরুদ্ধে।

অপরদিকে একই দিনে হাসপাতাল ভবনের মূল নকশা না মেনে কার পার্কিংয়ের জায়গায় স্টোররুমসহ অন্য কাজে ব্যবহার করায় ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।