বাদীকে মামলা তুলে নিতে প্রাণ নাশের হুমকী উত্তরখানে

রাজধানীর উত্তরখানে মেহেদী হাসান ওরফে মো: সুমন ভূঁইয়া (৩২)নামে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা চালিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। এঘটনায় গুরুতর আহত মো: সুজন বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ইউনিট-১ বেড নম্বর-৩ এ ভর্তি থেকে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন।

কিন্তু এঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে উত্তরখান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলেও রহস্যজনক কারণে থানা পুলিশ মামলার আসামীদেরকে এখনও পর্যন্ত আটক কিংবা গ্রেফতার করতে পারেনি। মামলার আসামীরা (দুর্বৃত্তরা) উত্তরখানের নিজ নিজ এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচেছ। সেই সাথে মামলার বাদী মো: বাবুল ভূঁইয়া সহ তার পরিবারের অন্যান্য লোকজদেরকে মামলা তুলে নিতে একের পর এক হুমকী ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ৫ অক্টোবর ২০১৭ ইং তারিখ দিবাগত রাত সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর উত্তরখান থানার মাউসাইদ মিরাশপাড়া ভূঁইয়া বাড়িতে একটি তুচছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্ব শত্রুতার জের হিসেবে দুর্বৃত্তরা এঘটনাটি ঘটিয়েছে। ঘটনার বিবরনে জানা যায়, গত ৫ অক্টোবর ২০১৭ ইং তারিখ দিবাগত রাত সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর উত্তরখান থানার মাউসাইদ মিরাশপাড়া ভূঁইয়া বাড়িতে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী শরীফ ও তার কতিপয় সহযোগীর সাথে একটি তুচছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পারিবারিক বিরোধ ও পূর্ব শত্রুতার জের হিসেবে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী শরীফ গংরা প্রবাসি মো: সুজন ভূঁইয়ার সাথে কথাকাটাকাটি ও বাকবিতন্ড হয়। তখন কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে দুর্বৃত্তরা সুমনকে ধরে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় এবং মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে দুর্বৃত্তরা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়।

পরে ভাগ্যক্রমে সে প্রাণে বেঁচে যায়। উক্ত ঘটনাটি পর খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে রক্তাক্ত অবস্থায় মেহেদী হাসান ওরফে মো: সুমন ভূঁইয়া (৩২)কে উদ্বার করে প্রথমে উত্তরার আব্দুলাহপুর আইচি মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে মো: সুমন ভূঁইয়া (৩২) কে টঙ্গী ২৫০ শয্যা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সুজনকে টঙ্গী জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বর্তমানে মো: সুমন ভূঁইয়া (ঢামেক) হাসপাতালে ইউনিট-১ বেড নম্বর-৩ এ ভর্তি থেকে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন। এঘটনায় মো: বাবুল ভূঁইয়া বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর -০৫। তারিখ-০৬-১০-২০১৭। ধারা-৪৪৮/৩২৬ ও ৩০৪ দন্ডবিধি মোতাবেক।

ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার প্রফেসর মঈনউদ্দিন জানান, ভর্তিকৃত রোগী মেহেদী হাসান ওরফে মো: সুমন ভূঁইয়ার শরীরের গলার নিচে শ্বাসনালী কেটে গেছে। এছাড়া তার শরীরের পিঠে ও মাথায় অসংখ্য ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাত রয়েছে। তার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তার অবস্থা এখনও শংকটাপন্ন। পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হতে সময় লাগবে। মামলার বাদী মো: বাবুল ভূঁইয়া এ প্রতিবেদককে জানান, তার ছোট ভাই মেহেদী হাসান ওরফে মো: সুমন ভূঁইয়া এক সময় মালয়েশিয়া ছিলেন।

গত ৩ থেকে ৪ বছর আসে দেশে ফিরে এসে ২টি ইজিবাইক কিনে তার ব্যবসা করতেন। তার পিতার নাম মৃত আলাউদ্দিন ভূঁইয়া মাউসাইদ ভূঁইয়া বাড়ি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হলো উত্তরখান থানার এসআই মো: শাহাবুদ্দীন এ প্রতিবেদককে জানান, পুলিশ উক্ত ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে ২টি ধারালো ছোরা ও ২টি চাকু উদ্বার করেছে। এঘটনায় গুরুতর আহত মো: সুমন ভূঁইয়ার বড় ভাই মো: বাবুল ভূঁইয়া বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর-০৫। তারিখ-০৬-১০-২০১৭। দুর্বৃত্তরা এখন মামলার বাদী আহত মো: সুজন ভূঁইয়ার বড় ভাই মো: বাবুল ভূঁইয়া,ইজমে আযম মিলন সহ তার পরিবারের অন্যান্য লোকদেরকে প্রাণনাশের হুমকী সহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। সেই সাথে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়া ঘটনার সাথে যারা জড়িত ও অভিযুক্ত দুর্বৃত্তরা নিজ এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও থানা পুলিশ রহস্যজনক কারণে আসামীদেরকে ধরছেনা বলে ও অভিযোগ করেন মামলার বাদী মো: বাবুল ভূঁইয়া। অভিযোগ উঠেছে দুর্বৃত্দরে মধ্যে শরীফ,রাজীব ও তার সহযোগিতা উত্তরখানে মাউসাইদ সহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই, খুন, রাহাজানি, জমিজবরদখল, মারধার, চাঁদাবাজী, অপহরণ সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড অবাধে চালিয়ে যাচেছ। শরীফ এর নামে একটি হত্যা মামলা সহ তার সহযোগীদের নামে একাধিক মামলা ও জিডি রয়েছে। শরীফ গংরা মিলে উত্তরখানে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছেন।

তারা ওই এলাকায় একটি ত্রাসের রাজরাজত্ব তৈরী করেছেন বলে এলাকাবাসিরা অভিযোগ করেছেন। এবিষয়ে জানতে উত্তরখান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: হেলাল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এ প্রতিবেদককে জানান, এঘটনায় মো: বাবুল ভূঁইয়া বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আহত মো: সুমন ভূঁইয়া ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন। পুলিশ মামলার আসামী (দুর্বৃত্তদেরকে) ধরতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে।

এব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল,মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক, র‍্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) মো: বেনজীর আহমেদ ও উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জয়দেব কুমার ভদ্র সহ আইন প্রয়োগকারী সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তাদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও মামলার বাদী মো: বাবুল ভূঁইয়া।

তানজীন মাহমুদ (তনু), উত্তরখানে প্রতিনিধি