বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ হয়ে উঠেছে নির্বিষ!
প্রশ্নটা গত জুনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পরও উঠেছিল—কোথায় হারাল বাংলাদেশের সেই বোলিং? কাল কিম্বার্লিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০ উইকেটে হারের পর প্রশ্নটা আরও জোরালো হচ্ছে—কোথায় হারাল বাংলাদেশের বোলারদের ধার? ওভারের পর ওভার নির্বিষ বোলিং করে যাচ্ছেন বোলাররা। আর প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা মনের সুখে রান-উৎসব করছেন! যেন বাবুরাম সাপুড়ের সাপ। শিং নেই, নখ নেই। ছোটে না কি হাঁটে না, কাউকে যে কাটে না। করে নাকো ফোঁসফাঁস, মারে নাকো ঢুসঢাস!
প্রতি ম্যাচে সবাইকে একসঙ্গে জ্বলে উঠতে হবে, তা নয়। একটা ম্যাচে দু-একজন নিষ্প্রভ থাকতেই পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের পুরো বোলিং বিভাগই তো এখন ভেজা বারুদ! এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে উইকেট যেন সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের বোলারদের কাছে। টেস্ট সিরিজে প্রতিপক্ষের ৪০ উইকেটের মাত্র ১২টি নিতে পেরেছে বাংলাদেশে। সেরা বোলারের তালিকায় সবার ওপরে ৩ উইকেট নেওয়া মুমিনুল হক!
গত দুই বছরে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ এগিয়েছে পেসারদের ওপর সওয়ার করে। যে পেস বোলিং বাংলাদেশ দলকে এনে দিয়েছে স্মরণীয় কিছু সাফল্য, সেটিই এখন ব্যর্থ! বাংলাদেশ সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। সেখানেও দেখা গেছে বোলারদের ব্যর্থতার মিছিল। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সেরা বোলিং দেখা গেছে আরেক অনিয়মিত বোলার মোসাদ্দেকের হাত থেকে!
এ বছর ওয়ানডেতে উইকেট পাওয়ার দিক দিয়ে বাংলাদেশের বোলাররা দল হিসেবে আছেন ১২ নম্বরে। বাংলাদেশের বোলারদের চেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছে এমনকি আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে বা আয়ারল্যান্ডের বোলাররাও! এ বছর বাংলাদেশের কোনো বোলার ওয়ানডেতে ইনিংসে ৫ উইকেট পাননি। এ বছর বাংলাদেশ ১২টি ওয়ানডে খেলেছে—এই যুক্তিতেও সান্ত্বনা খোঁজা যাচ্ছে না। এই ১২ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বোলাররা নিয়েছেন ৫৭ উইকেট। অথচ ৭ ম্যাচেই ৫৭ উইকেট আছে আরব আমিরাতের বোলারদের! আর ১২ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বোলাররা তুলে নিয়েছেন ৮৩ উইকেট। ১৩ ম্যাচে আফগানদের উইকেট ৯৪টি!
ব্যর্থতার ধারাটা অব্যাহত আছে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও। বোলারদের কেন এই দুর্দশা, সেটির ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না সাবেক অধিনায়ক ও অন্যতম নির্বাচক হাবিবুল বাশারও, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে হয় আপনাকে জোরে বোলিং করতে হবে, না হলে অন্য কিছু করতে হবে। আমাদের বোলাররা ধারাবাহিক জোরে বোলিংও করতে পারছে না। স্পিনাররাও বল ঘোরাতে পারছে না। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা খুব ভালো জানে এই উইকেটে তাদের কীভাবে বোলিং করতে হবে। সেখানে আমাদের বোলাররা কিছু করতে পারছে না।’
কিম্বার্লিতে বাংলাদেশের দেওয়া ২৭৮ রানের লক্ষ্যটা স্বচ্ছন্দে টপকে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। জাতীয় দলের সাবেক কোচ সরওয়ার ইমরান বলছেন, যে বোলিংটা কাল বাংলাদেশ করেছে, ৩৫০ রান যথেষ্ট হতো না। ইমরান বিস্মিত, ‘দুজন বিদেশি কোচ আছেন বোলারদের দেখার জন্য (কোর্টনি ওয়ালশ ও সুনীল যোশী)। তারপরও যদি এমন পারফরম্যান্স হয়, সেটাই আশ্চর্য লাগছে! আমাদের বোলারদের পারফরম্যান্স তো এত খারাপ ছিল না।’