আচরণগত অর্থনীতির তৃতীয় নোবেল জয় রিচার্ড থেলার

‘আচরণগত অর্থনীতি’ নিয়ে কাজ করে ২০১৭ সালে নোবেল জয় করেছেন রিচার্ড থেলার। একই বিষয় নিয়ে কাজ করে এর আগে নোবেল জয় করা অর্থনীতিবিদরা হলেন— ড্যানিয়েল কানেমান (২০০২) ও রবার্ট শিলার (২০১৩)।

ত্রিশের দশকের মহামন্দার ফলে কেইনসিয়ান অর্থনীতির জন্ম অর্থনৈতিক তত্ত্বের দৃশ্যপট চিরদিনের জন্য বদলে দেয়। যদিও ২০০৭-পরবর্তী সময়ের গ্রেট রিসেশন বা মহাসংকটের বেশ আগেই ‘আচরণগত অর্থনীতির’ জন্ম, তবে এটি নতুন করে আলোচনায় এসেছে, কারণ বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, আর্থিক বাজারের ‘অযৌক্তিক’ আচরণের কারণে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। থেলার অনুপ্রাণিত হয়েছেন সত্তরের দশকে করা আমোস টেভারস্কি ও কানেমানের কাজ দেখে, যা প্রতিষ্ঠিত করেছে, মানুষ নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আন্দাজবশত ভুল করে। মানুষ কোনো নিখুঁত কম্পিউটার নয়, তাদের অপছন্দ ত্যাগ করার প্রবণতা রয়েছে, তারা ন্যায্যতা ও সমতাকে গুরুত্ব দেয় এবং তাদের জ্ঞানীয় সক্ষমতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও প্রেরণা একে অন্যের থেকে আলাদা।

আপনি মনে করতে পারেন, এটা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? এটা কি মনোবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরা আগে থেকেই জেনে আসছেন না? অবশ্যই তারা জানেন। কিন্তু এ অন্তর্দৃষ্টি কখনই অর্থনৈতিক মডেলে স্থান পায়নি। একটি সাধারণ ও ফলপ্রসূ সরলীকরণ হলো, এই অনুমান করা যে, এজেন্টরা পুরোপুরি বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন। এ ধারণার ওপর ভিত্তি করে অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন অর্থনৈতিক ইস্যু ও বাজার সমাহার বিশ্লেষণে শক্তিশালী মডেল তৈরি করেন। যদিও মনোবিজ্ঞানীরা স্ট্যান্ডার্ড নিউ ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিতে যুক্তিসঙ্গত আচরণসংশ্লিষ্ট অনুমানে অসংখ্য পদ্ধতিগত বিচ্যুতি নথিভুক্ত করেছেন। তারা দেখিয়েছেন কীভাবে অনুভূতির সহজাত প্রবৃত্তি যুক্তিসঙ্গত পছন্দকে প্রায়ই দমন করে। মনোবিজ্ঞান থেকে অন্তর্দৃষ্টি এনে প্রচলিত অর্থনীতি বিশ্লেষণে যুক্ত করার ফলে আচরণগত অর্থনীতির সৃষ্টি হয়েছে। এটি গবেষণার একটি উদীয়মান ক্ষেত্র, অর্থনীতির অনেক উপক্ষেত্রে এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।

আচরণগত অর্থনীতি নিজ উত্পত্তির অস্পষ্টতা কাটিয়ে একাডেমিক কাজের যুগান্তকারী ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। একদা এটিকে শুধু মজাদার বুদ্ধিবৃত্তিক কৌতূহল মনে করা হলেও এখন এটি গবেষণার অন্তর্দৃষ্টিযুক্ত একটি সম্মানিত ক্ষেত্র এবং মানুষের আচরণ যুক্ত রয়েছে, এমন সব ক্ষেত্রে এর প্রভাব রয়েছে। কোম্পানিগুলো নিজেদের অনেক কাজেই আচরণগত বিজ্ঞান ব্যবহার শুরু করেছে— পণ্যের নকশার মানোন্নয়ন, আরো প্ররোচক বাজার তৈরি, কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে উন্নতি এবং নিজ কর্মীদের আরো সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, আরো হাসিখুশি ও আরো উত্পাদনশীল হতে সহায়তা করতে। সামাজিক সমস্যা দূর করতে যেভাবে সরকারি ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো আচরণগত অর্থনীতির অন্তর্দৃষ্টি ও গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করছে, তা এর নতুন খুঁজে পাওয়া প্রভাব।

সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে নতুন এক ধরনের সংস্থার উত্পত্তি হচ্ছে, যাদের লক্ষ্য সমাজের ভালোকে আরো এগিয়ে নিতে আচরণগত অর্থনীতি ব্যবহার করা। এ সংস্থাগুলোর মধ্যে কিছু আচরণগত কাঠামো প্রয়োগে খুবই দক্ষ হয়ে উঠেছে এবং নিজেদের কাজ দিয়ে সমাজের উন্নতি ও

সরকারি নীতি/পাবলিক পলিসি প্রোগ্রামে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে।

আচরণগত অর্থনীতিবিদরা অনুমান করেন যে, ব্যক্তিরা তাদের বয়স বা বুদ্ধি যা-ই হোক না কেন, নিজেদের জন্য কোনটা সর্বোত্তম, তা নিয়ে ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন। প্রলোভনে পড়ে ব্যক্তিরা দুর্বল ও ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেন, যদিও তাদের সামনে পরিষ্কারভাবে এমন অনেক সিদ্ধান্ত থাকে, সেগুলো নিলে দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফল দিত। অন্যদের সঙ্গে মিলে থেলারের প্রস্তাব হলো, ‘হোমার ইকোনমিকাস’ প্রচলিত অর্থনীতির ‘হোমো ইকোনমিকাস’ প্রতিস্থাপন করে মানুষকে বর্ণনা করা হয়, কারণ বেশির ভাগ সিদ্ধান্তগ্রহীতা বিখ্যাত টিভি শো ‘দ্য সিম্পসনের’ কাল্পনিক চরিত্র ‘হোমার সিম্পসনের’ অনুরূপ (তারা প্রতি মুহূর্তের জন্য বাঁচে, পরবর্তী ফলাফল নিয়ে চিন্তা করে না, বিস্তারিতের দিকে তেমন নজর দেয় না এবং আচরণগত ব্যয় বা মুনাফা সম্পর্কে অপেক্ষাকৃত অজ্ঞ)। মানুষের আচরণের একজন বিচক্ষণ পর্যবেক্ষক সন্দেহাতীতভাবে একমত হবেন যে, অনেক আচরণই যৌক্তিক নয়। জ্ঞান অর্জন কমে যাচ্ছে এবং ক্লাসে ভালো করার সম্ভাবনা হ্রাস পাচ্ছে— এটা জেনেও ছাত্ররা শিক্ষকের লেকচার নোটবদ্ধ করার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজে ঘোরাঘুরি করে থাকে। দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করতে পারে— এটা সত্ত্বেও শিশুরা দুপুরের খাবারে আপেলের পরিবর্তে চকোলেট পছন্দ করে। একই লোক বীমাও কিনছে আবার লটারির টিকিটও কিনছে, যা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী আচরণ।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে মানবিক মনোবিজ্ঞানের নতুন অন্তর্দৃষ্টি যুক্ত করার মাধ্যমে থেলার আচরণগত অর্থনীতির ধারণাগত ও অভিজ্ঞতাগত ভিত্তি দিয়েছেন। মানুষের আচরণ বোঝা ও অনুমান করার জন্য থেলার অর্থনীতিবিদদের হাতে বিশ্লেষণাত্মক ও পরীক্ষামূলক সরঞ্জাম তুলে দিয়েছেন। অর্থনীতি পেশায় থেলারের কাজের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। তার কাজ বহু গবেষককে অনুপ্রাণিত করেছে আনুষ্ঠানিক তত্ত্ব তৈরিতে এবং গবেষণামূলক পরীক্ষা চালাতে।

যারা বৃত্তের বাইরে চিন্তা করেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রায়ই যা ঘটে, থেলারের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। প্রাথমিকভাবে থেলারের গবেষণা তার একাডেমিক সহকর্মীরা সন্দেহের চোখে দেখতেন। ক্যারিয়ারের প্রথম ২০ বছর তাকে মিলটন ফ্রিডম্যানের মতো অর্থনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। মিলটন ফ্রিডম্যান থেলারের কাজ নিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের উচিত হবে না, অনুমানের বাস্তবতা দিয়ে একটি তত্ত্বের বিচার করা; আমাদের এটির বিচার করতে হবে এর পূর্বাভাসের সঠিকতায়।’ থেলারের ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে বেশকিছু কেন্দ্রীয় ধারণা এসেছে, যেগুলো অর্থনীতির অনুমানের বিরোধিতা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, কীভাবে অন্যের জিনিসের তুলনায় নিজের জিনিসের দাম বেশি মনে করেন ব্যক্তিরা, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি ‘এনডাওমেন্ট ইফেক্ট’ নিয়ে লিখেছেন। মস্তিষ্কে এ প্রভাবের প্রমাণও রয়েছে। বিষয়টি অর্থনীতির যুক্তিযুক্ত মতকে চ্যালেঞ্জ করে। থেলার ওইসব বিদ্রোহী অর্থনীতিবিদের দলে যোগ দিয়েছিলেন, যাদের যুক্তি হলো— যৌক্তিকতার বর্ণনামূলক মডেল রয়েছে। যেমন— বিনিয়োগকারীরা উদাসীন, অযৌক্তিক পথে কাজ করেন— এটা ধরে নেয়ার বদলে থেলার যুক্তি দেখিয়েছেন যে, বিনিয়োগকারীরা আচরণগত পক্ষপাতিত্বের প্রভাবে পড়ে কাজ করেন। ফলে তারা প্রায়ই নিখুঁত সিদ্ধান্তের চেয়ে কম নিশ্চিত সিদ্ধান্ত

নিয়ে থাকেন।

ব্রেক্সিটের বিষয়টিই ধরা যাক। থেলার যুক্তি দেখিয়েছেন যে, যখন ব্রিটিশ ভোটাররা সম্ভ্রান্ত ও মূলধারার গণমাধ্যমের উপস্থাপন করা যুক্তি গ্রহণ করেছিলেন, তখন আদতে তারা অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক পথ পছন্দ করেছিলেন। ইইউ ত্যাগ করা নিয়ে ব্রিটেনে দ্বিতীয় গণভোট আয়োজনের দাবিও করেছিলেন তিনি। তিনি বলছেন, ব্লকটি ছাড়ার পরে যে ফলাফল আসবে, এ সম্পর্কে ভোটাররা সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলেন না। গত আগস্টে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে লেখা এক প্রবন্ধে তিনি দাবি করছেন যে, ব্রিটিশ ভোটারদের ‘এমন একটি পছন্দ দিয়ে দেয়া হয়েছিল, যেটি সংবেদনশীলভাবে মূল্যায়ন করা অসম্ভব’ এবং ‘যদি ঘটনাগুলো পরিবর্তিত হয়’, তবে ব্রেক্সিট নিয়ে তাদের চিন্তা পরিবর্তনের সুযোগ দেয়া উচিত। সংক্ষেপে ব্রেক্সিট মানে (অবিলম্বে) ব্রেক্সিট হওয়া উচিত হবে না। একক বাজারের সদস্য হওয়ার সুবিধা ও ব্যয় বিষয়টি মূল্যায়ন করার চেয়ে গণভোটে একদল ভোটারের বিভিন্ন ইস্যুতে অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। ‘চয়েজ আর্কিটেকচার বা পছন্দের স্থাপত্য’ নিয়ে থেলার যে কাজ করেছেন, সেখানে তিনি ব্রেক্সিট গণভোট নিয়ে তার বিশ্লেষণ যুক্ত করেছেন। এটি মূলত ওই ফ্রেমওয়ার্ক, যা ব্রিটিশদের ইইউতে থাকা অথবা বের হয়ে যাওয়ার মধ্যে একটিকে বেছে নেয়ার পছন্দ দিয়েছে। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, মূলত এ পছন্দ বিষয়টি সহজ বাইনারি প্রশ্নের পোশাকে অত্যন্ত জটিল চরিত্রের। চয়েজ আর্কিটেকচার বর্ণনা করছে কীভাবে আমাদের নেয়া সিদ্ধান্তের ওপর পরিকল্পনা ও পছন্দের সংখ্যা প্রভাব ফেলে। চয়েজ আর্কিটেকচার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর প্রভাব ফেলে পছন্দের সহজ রূপ উপস্থাপনের মাধ্যমে, সক্রিয়ভাবে অনুষঙ্গ অহ্বান করে অথবা একটি পছন্দকে বিকল্পটির তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি লক্ষণীয় বা সহজতর করে, যাতে তা গ্রহণ করা হয়।

থেলারের অন্যতম চমকপ্রদ অবদান হলো, মানসিক হিসাবের ধারণা— মানুষ যখন কোনো আর্থিক সিদ্ধান্ত নেয়, তখন নিজেদের পুরো জীবনের কল্যাণের কথা ভাবে না। তারা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের কর্মক্ষমতার ওপর নির্ভর করে এবং সঞ্চয় নিয়ে খুব একটা সচেতন নয়। যেমন— আপনি যদি অন্য জায়গায় যান, তবে একটি ইলিশে ২০ টাকা সাশ্রয় করতে পারবেন, হয়তো আপনি সেখানে যাবেন। কিন্তু আপনি যদি ভারতে ছুটি কাটানোর জন্য আপনার মুদ্রার বিনিময়ে একই ২০ টাকা সাশ্রয় করতে পারেন, আপনি তা করবেন না; যদিও মুদ্রাবিনিময় করতে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে যেতে আপনার যে সময় নষ্ট হবে, তা আরেকটি ইলিশ বাজারে যেতে যে সময় নষ্ট হবে, তা একই।

থেলার গবেষণা করে দেখিয়েছেন, মানুষ দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনা গ্রহণে কতখানি অদক্ষ। যদিও আমরা প্রত্যাশা করি যে, একটা দীর্ঘ সময় বাঁচব; তবু বেশির ভাগ লোক অবসরের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করে না। উন্নত বিশ্বের ক্রমবর্ধমান স্থূলতার সমস্যা আরো দেখাচ্ছে যে, মানুষ নিজেদের সবচেয়ে উত্তম স্বার্থ রক্ষার্থে কতটুকু অদক্ষ। এটা বোঝার জন্য থেলারের প্রস্তাব হলো, প্রত্যেককে দুটি মানুষ হিসেবে দেখা: আপনার একটি অংশ যে পরিকল্পনা করে, আরেকটি অংশ সে পরিকল্পনামাফিক কাজ করে (বা করে না)। আপনার পরিকল্পনাকারী অংশ হয়তো মনে করবে জিমের বার্ষিক সদস্যপদ গ্রহণ যুক্তিসঙ্গত বা সঠিক সিদ্ধান্ত— এটি প্রত্যাশা করবে যে, আপনি প্রতিদিন জিমে যাবেন এবং ফিট হয়ে উঠবেন। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী অংশ হয়তো এটি অনুসরণ নাও করতে পারে। আপনার বাস্তবায়নকারী অংশ আরো সুবিধাজনক সময়ের কথা চিন্তা করে ক্রমাগত জিমে যাওয়া বাতিল করবে, এভাবে বছর চলে যাবে। আমাদের উদ্দেশ্যপূরণে নিজেদের ব্যক্তিত্বের পরিকল্পনাকারী ও কার্যসম্পাদনকারী অংশকে বুঝতে হবে। একইভাবে সরকার হয়তো নিয়ন্ত্রণ চুক্তির প্রতি আগ্রহী হতে পারে, যা মানুষের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ ও প্রতিদিনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যকার বিছিন্নতাকে কাজে লাগাবে। এ দ্বৈততাকে স্বীকার করার মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতের জন্য আরো ভালো পরিকল্পনা করতে পারব— এমন পরিকল্পনা, যা আমাদের কার্যসম্পাদনকারী অংশও খুশি মনে অনুসরণ করবে।

এ মানসিক অন্তর্দৃষ্টি ‘নাজ থিওরিতেও’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নাজ থিওরি থেলারের আরেকটি ধারণা। নাজ বা সামান্য ঠেলা বা ধাক্কা দেয়া হলো ছোট অনুপ্রেরণার মতো, যা মানুষের আচরণকে প্রভাবিত করে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এটি কাজ করলেও কোম্পানিগুলোও এটি ব্যবহার করে। যেমন— থেলার দেখিয়েছেন কীভাবে কোম্পানিগুলো কাস্টমারদের কাছে সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায়ে পণ্য উপস্থাপন করার কৌশল ব্যবহার করে। বিক্রয়কর্মী যেভাবে তাদের পণ্য উপস্থাপন করেন এবং ক্রেতাকে কিছুটা উত্সাহ দেন, তাতে মানুষকে বাড়তি ব্যয় করতে অনুপ্রাণিত করে। যখন একজন গাড়ির বিক্রয়কর্মী আপনাকে ছাড় দেবেন, প্রথমে তারা ২০ শতাংশ মূল্য বেশি ধরবেন এবং এর পর মূল্য কমাবেন। অথচ দেখাবেন যে, শুধু আপনার জন্যই ছাড় দেয়া হয়েছে।

নাজ থিওরি গ্রহণ করছে সরকারগুলো, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে, তাদের নাগরিকরা ভবিষ্যতের জন্য আরো ভালোভাবে প্রস্তুত। যেমন— পেনশন স্কিমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষকে যুক্ত করা। বাছাই করার সুযোগ দেয়ার তুলনায় বাছাইয়ে সুযোগ না দিয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি মানুষকে পরিকল্পনায় যুক্ত করা গেছে।

কীভাবে ব্যক্তি সম্পদ বরাদ্দ, আর্থিক বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, বিনিয়োগের সুযোগসন্ধান ও অবসরকালীন সঞ্চয় পরিকল্পনা মাথায় রেখে নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণে উন্নতি করতে পারেন, তা অবমুক্ত করার চেষ্টা করেছে আচরণগত আর্থিক ক্ষেত্রে রিচার্ড থেলারের কাজ। তার গবেষণা চেষ্টা করেছে ব্যক্তির মধ্যে প্রোথিত থাকা ত্রুটি বুঝতে এবং এমন একটি মডেলের ব্যবহার, যেটা প্রতিফলিত করবে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মানুষ কেমন আচরণ করে। সহযোগীদের সঙ্গে মিলিতভাবে থেলার অর্থনীতিবিদদের মানব মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে নতুন অন্তর্দৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক ফলাফল বোঝা ও পূর্বাভাস দেয়ার জন্য নতুন ফ্রেমওয়ার্ক দিয়েছেন। চূড়ান্তভাবে তিনি দেখিয়েছেন যে, কীভাবে আচরণগত অর্থনীতির অন্তর্দৃষ্টির ওপর ভিত্তি করে নেয়া নীতি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অপেক্ষাকৃত ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।