আয়ের হিসাব চেয়ে ১০ ধরনের পেশাজীবীর রিটার্ন বাধ্যতামূলক
আয়কর অধ্যাদেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার করদাতার রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এনবিআরের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী, এই বছর ১০ শ্রেণির পেশাজীবীদের জন্য রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আপনি যদি একটি গাড়ির মালিক হন কিংবা অভিজাত ক্লাবের সদস্য হন; এমনকি মধ্যম পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদেরও এবার রিটার্ন দিতে হবে। এর বাইরে ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধিরাও এই তালিকায় আছেন। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, হিসাববিদ, আইনজীবী, ঠিকাদারসহ ১০ ধরনের পেশাজীবীর জন্য রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। সামাজিক অবস্থান ও জীবনযাত্রার বিবেচনায় এসব শ্রেণি-পেশার মানুষের বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকার কম নয়। এ কারণেই তাঁদের রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করেছে এনবিআর। তবে যাঁদের আয় সত্যিকার অর্থেই আড়াই লাখ টাকার কম, তাঁরা রিটার্ন দিয়ে আয়-ব্যয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবেন।
এই পেশাজীবীর তালিকায় কারা আছেন? যাঁদের বাধ্যতামূলক রিটার্ন জমা দিতে হবে, তাঁরা হলেন চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, হিসাববিদ, ব্যয় ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বিশেষ হিসাববিদ, প্রকৌশলী, স্থপতি, জরিপকারী, আয়কর পেশাজীবী এবং সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা স্থানীর সরকারে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদার।
অন্যদিকে কিছু কিছু ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক। যেমন বণিক বা শিল্পবিষয়ক বা ব্যবসায়ী সংঘের সদস্য এমন ব্যবসায়ীদের অবশ্যই বছর শেষে আয়কর বিবরণী জমা দিতে হবে। আবার অনেকেই সিটি করপোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করেন, তাঁরাও বাধ্যতামূলক রিটার্ন দেওয়ার তালিকায় আছেন। অন্যদিকে কোনো কোম্পানির শেয়ারধারী পরিচালক বা কর্মী, ফার্মের অংশীদার হলেও রিটার্ন দিতেই হবে।
চাকরিজীবীদের জন্য কী অপেক্ষা করছে? এবারই প্রথমবারের মতো বেসরকারি চাকরিজীবীদের রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। করযোগ্য আয় থাকুক, না থাকুক; তাঁদের রিটার্ন জমা দিতেই হবে। তা না হলে ওই চাকরিজীবী যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, ওই প্রতিষ্ঠান তাঁকে দেওয়া বেতন-ভাতা খরচ হিসেবে দেখাতে পারবে না। আবার সরকারি চাকরি করেন কিংবা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো চাকরিজীবীর বেতন-ভাতা যদি ১৬ হাজার টাকার বেশি হয়, কিন্তু করযোগ্য আয় নেই, তাঁদেরও বাধ্যতামূলক রিটার্ন জমা দিতে হবে।
সম্পদ ও জীবনযাত্রার বিবেচনায় কারা অবশ্যই রিটার্ন দেবেন? আপনি একটি গাড়ির মালিক, কোনো উপায় নেই। আপনাকে রিটার্ন জমা দিতেই হবে। আপনি ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, উত্তরা ক্লাবের মতো অভিজাত ক্লাবের সদস্য। এনবিআর ধরেই নিয়েছে, আপনার বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকার বেশি। তাই এসব অভিজাত ক্লাবের সদস্যদের রিটার্ন জমা দিতে হবে।
আপনি রাজনীতি করেন, জনপ্রতিনিধি হতে চান। তবে আপনাকে এখন থেকেই আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখিয়ে রিটার্ন দেওয়া শুরু করতে হবে। রিটার্ন না দিলে পৌরসভা, সিটি করপোরেশন বা সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে পদপ্রার্থীদের রিটার্ন জমার অনুলিপি নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হয়। এ ছাড়া আপনি যদি আগের তিন বছরে একবারও কর দিয়ে থাকেন, তবে আপনাকে রিটার্ন দিতেই হবে।
আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন দেওয়া যাবে। রিটার্নে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে হবে। করযোগ্য হলে কর দিতে হবে।