‘এশিয়ার শহরগুলোর ক্রমবর্ধমান বৈষম্য সামাজিক বিভাজন ডেকে আনতে পারে’

শহরের ভেতরেও নাগরিক সুবিধায় যথেষ্ট বৈষম্য রয়েছে। শহরাঞ্চলের নাগরিক জীবন নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে বিশ্বব্যাংক।

প্রতিবেদনে এশিয়ার বিভিন্ন শহরে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য একটি সামাজিক বিভাজন ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। এ কারণে বিশ্বব্যাংক শহুরে দরিদ্রদের জন্য আরও বেশি উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় অর্ধেক মানুষ শহরে থাকে। দ্রুত নগরায়ন সাড়ে ৬৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত হতে সাহায্য করেছে। গোটা দুনিয়ার শহুরে জনগোষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশ বা ১২০ কোটি মানুষ এ অঞ্চলে বসবাস করে। যা প্রতি বছর ৩ শতাংশ হারে বাড়ছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ কোটি মানুষ থাকে বস্তিতে। যাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাস করে চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় বস্তিতে মাথাপিছু আয় মাসে ৮২ মার্কিন ডলার, অন্যদিকে দেশটির আনুষ্ঠানিক খাতে এর পরিমাণ ২১৬ ডলার। বস্তিগুলোর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা পানি দূষণ ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর জন্য বিরাট হুমকি। এসব বস্তির বেশির ভাগেই নেই বেঁচে থাকার ন্যূনতম সুবিধা। কম জায়গায় গাদাগাদি করে থাকা বস্তিতে পানি, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা খুবই শোচনীয়।

এক সমীক্ষায় দেখা যায়, এ রকম এক বস্তিতে প্রতি হাজারে ৩৪২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এবং অন্তত ৪৩ শতাংশ শিশু কোনো না কোনো রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত। বলা হয়, ইন্দোনেশিয়ার শতকরা ২৭ ভাগ শহুরে মানুষ স্যানিটেশন সুবিধা পায় না। আর ফিলিপাইনে এ হার ২১ ভাগ। অধিকাংশ বস্তি এলাকার রাস্তা সরু থাকায় গণপরিবহন ব্যবস্থা খুবই শোচনীয়। তদুপরি জাকার্তায় রিকশা ও চীনের ইউহানে ত্রিশওয়া (অতিরিক্ত আসনসহ রিকশা) নিষিদ্ধ করায় গরিব মানুষের খরচ আরও বেড়েছে। এতে বলা হয়, মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটোরে অপ্রতুল জনপরিবহন ব্যবস্থার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষকে তাদের আয়ের শতকরা ৩৬ ভাগ খরচ করতে হয় যাতায়াতের জন্য।

প্রতিবেদনটির প্রধান গবেষক ও বিশ্বব্যাংকের নগর বিশেষজ্ঞ জুডি বেকার বলেন, ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের ফলে যে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে, সেটি শহর অঞ্চলের জন্য বেশি বিপজ্জনক। কারণ অধিকাংশ সময় বস্তিতে থাকা জনগোষ্ঠীর ঠিক পাশেই বিত্তশালীরা বসবাস করেন। এ ধরনের অবস্থা দুনিয়ার অন্যান্য অঞ্চলেও অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে। বিশ্বব্যাংক জানায়, সরকারগুলোর উচিত তাদের নীতিমালা পুনর্নির্ধারণ করা, যাতে শহুরে দরিদ্ররা আরও বেশি বেতন ও নিরাপদ চাকরির পাশাপাশি অন্যান্য নাগরিক সুবিধা পায়।

ব্যাংকটির পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিক্টোরিয়া কোওয়াকওয়া বলেন, গ্রাম থেকে শহরে আসার পর বেশির ভাগ মানুষই মৌলিক সুবিধা পায় না।