লাবিব আত্মহত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মিরপুরে বিক্ষোভ

গত ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএসের ১২ নম্বর সেকশনের ৭ নম্বর সড়কের ৪০১ নম্বর বাড়িতে আত্মহত্যা করে লাবিব ইসলাম (১৭) নামের আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের এক মেধাবী ছাত্র। রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএসের ১২ নম্বর সেকশনের ৭ নম্বর সড়কের ৪০১ নম্বর বাড়িতে সে বসবাস করত। দুই বোনের একমাত্র ভাই ছিল লাবিব। লাবিব পঞ্চম, অষ্টম ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়।

প্রেমিকার লোকজনের হাতে পিতামাতাসহ আহত হওয়ার মানসিক যন্ত্রণা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে লাবিব। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মিরপুরে গতকাল বিক্ষোভ করেছে নিহতের পরিবার ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে প্রেমিকা মেহজাবীনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে তারা। লাবিবের বোন আনিকা আন নূর জানান, তারা বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে লাবিবের প্রেমিকার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মিরপুরের কালশী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ভিকারুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা পুলিশের বাঁধার সম্মুখীন হয়। শেষ পর্যন্ত মামলা নিতে রাজি হওয়ায় তারা কর্মসূচী থেকে সরে আসেন।

বোন আনিকা বলেন, তারা রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএসের ১২ নম্বর সেকশনের ৭ নম্বর সড়কের ৪০১ নম্বর বাড়িতে বসবাস করেন। তাদের দুই বোনের একমাত্র ভাই ছিল লাবিব। লাবিব পঞ্চম, অষ্টম ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্রী মেহজাবিনের সঙ্গে লাবিবের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। টানা ছয় মাস তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেহজাবিন মগবাজার টিএ্যান্ডটি কলোনিতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে বলে জানা গেছে।

মেয়েটি একাধিক প্রেমিক আছে। সম্প্রতি লাবিবের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। এ নিয়ে তার ভাইয়ের সঙ্গে মেয়েটির প্রায়ই তর্ক চলছিল। মেয়েটি সম্পর্ক রাখতে না চাইলেও লাবিব মেয়েটির। সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী ছিল। এমন টানাপোড়েনের কারণে লাবিব উদাস হয়ে ঠিকমতো পড়াশোনা করছিল না। বিষয়টি পরিবারের সবাই বুঝতে পারে। পূর্বপরিচিত হওয়ায় আব্বা-আম্মা মেয়েটির সঙ্গে গত কয়েকদিন ধরে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল। একমাত্র ছেলে হওয়ায় এবং বিপজ্জনক বয়সের কারণে আব্বা-আম্মাও বিষয়টি নিয়ে মেয়েটির সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন, যাতে ছেলের সঙ্গে মেয়েটির কোন ঝামেলা না হয়। কথাবার্তার একপর্যায়ে মেয়েটি সরাসরি কথা বলতে লাবিবকে নিয়ে বেইলী রোডের পাশে স্কাইভিউ পয়েন্টের ছাদে থাকা রেস্টুরেন্টে আসতে বলে। কথা মোতাবেক আব্বা আম্মা ও ভাই লাবিব আর লাবিবের এক বন্ধুকে নিয়ে সেখানে যান।

সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সেখানে সাক্ষাত করতে গেলে মেহজাবিন চিৎকার-চেঁচামেচি করে ব্যাপক শোরগোল করে। একপর্যায়ে সে সময় সেখানে আগ থেকে বসে থাকা মেহজাবিনের অন্তত ২০ জন আব্বা, আম্মা, লাবিব ও লাবিবের বন্ধুকে বেধড়ক মারধর করে। মেহজাবিনের লোকজন লাবিবকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে মারাত্মকভাবে আঘাত করে। পরে হোটেলের লোকজন সবাইকে উদ্ধার করে। তারা গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এ নিয়ে রাতভর বাসায় আলাপ-আলোচনা চলতে থাকে। ভোর চারটার দিকে লাবিব তার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। এর কয়েক মিনিট পর থেকেই লাবিবকে ডাকাডাকি করছিলেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছিলেন না।

পরে দরজা ভেঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় লাবিবকে উদ্ধার করে দ্রুত গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা লাবিবকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে গতকাল আনিকা ফেসবুক লাইভ এসে ঘটনার সব বর্ণনা দেন। তিনি দাবি করেন, প্রেমের সূত্র ধরে লাবিব আত্মহত্যা করেছে। লাবিব তার প্রেমিকার মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছে। প্রেমিকার লোকজনের হাতে পিতা-মাতার আহত হওয়ার মানসিক যন্ত্রণা সইতে পারেনি লাবিব। মূলত এজন্যই লাবিব অভিমানে ও কষ্টে আত্মহত্যা করতে পারে। তিনি আরো বলেন, আমার ভাই এর জন্যে আপনাদের সাহায্য লাগবে আমার। আমাদের লাইফও রিস্কে আছে। ভিডিওটি বেশি করে শেয়ার করে আমাদের সাহায্য করো।