বিশ্ব মহলকে চিঠি দিবে বিএনপি!

মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর নির্যাতন বন্ধের পাশাপাশি তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেবে বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে ওই চিঠি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের পাশাপাশি জাতিসংঘ তথা এর বিভিন্ন সংস্থাগুলোর কাছে দেওয়া হবে।

বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপ করে দলটির এমন সিদ্ধান্তের কথা জানা গেছে। স্থায়ী কমিটির অন্তত চার নেতা জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে চিঠির খসড়া তৈরির কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। তবে লন্ডনে অবস্থানরত দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঢাকায় নেতাদের টেলিফোনে আলোচনা হবে আজ-কালের মধ্যেই। এরপর সিনিয়র নেতাদের বৈঠকে ওই খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর মতে, বিএনপির চিঠিতে রাখাইন রাজ্যে জাতিগত দাঙ্গা অবসানে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের দাবি জানানো হবে। পাশাপাশি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে জিয়াউর রহমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির কথাও। ১৯৭৮ সালে হওয়া ওই চুক্তিতে সেই সময়ে বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গা ছিল তাদের প্রত্যেককেই মিয়ানমারের আইনানুগ নাগরিক বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। যদিও চুক্তিতে ‘নাগরিকত্ব রেজিস্ট্রেশন কার্ড’ দেখানোর কথা বলা হয়েছিল; কিন্তু ওই চুক্তির কারণে সে সময় দুই লাখের মধ্যে এক লাখ ৭০ হাজার জনকে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়েছে।

এ ছাড়া মিয়ানমার সরকার প্রকাশিত এনসাইক্লোপিডিয়ায় ১৯৭৪ সালের সংস্করণে রোহিঙ্গাদের একটি জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথাটিও বিএনপি চিঠিতে আন্তর্জাতিক মহলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায়।

কেননা, এসব তথ্য-উপাত্তই প্রমাণ করে, মিয়ানমারের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন যাবত্ মুসলিম ও রোহিঙ্গারা অংশগ্রহণ করেছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা নির্যাতনের ইস্যুটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানানোর ব্যাপারে বিএনপি তাগিদ অনুভব করছে। কিন্তু চিঠি দেওয়ার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সফরের সময় বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান, রাজনৈতিক দলের নেতা বা কূটনীতিকরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। সে হিসাবে সরকারপ্রধান বা জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিএনপি চিঠি দিতেই পারে।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চিঠি দেওয়ার কথা দলের অনেকে বলছেন, কিন্তু চূড়ান্তভাবে কী করব এখনো ঠিক করিনি। দেখি কী হয়। তিনি বলেন, বিএনপির ঢাকায় অবস্থানকারী নেতারা আজ-কালের মধ্যে বসব। এরপর দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।

‘চিঠি একটি দেওয়া হবে’—এটি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরো দুজন সদস্য। তবে তাঁরা নাম প্রকাশে রাজি হননি। একজন নেতা বলেন, আমি তো মনে করি, ভারত ও চীনের সরকারপ্রধানের কাছেও চিঠি দেওয়া উচিত।

এর আগে ২০১১ সালের ২৩ নভেম্বর ‘টিপাইমুখ’ ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া গত জুলাই মাসে ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানিয়ে খালেদা জিয়া চিঠি দেন। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে লন্ডনে পাঠিয়ে ওই চিঠিতে স্বাক্ষর নিয়ে আসা হয়। খসড়া চূড়ান্ত হলে একই প্রক্রিয়ায় এবারও আনা হবে তাঁর স্বাক্ষর।

সূত্র মতে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকায় বড় ধরনের একটি বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা যায় কি না এ নিয়ে দলের একাংশের মধ্যে চিন্তা আছে। তবে এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে এখনো আলোচনা হয়নি। এ ছাড়া এ ব্যাপারে দলটির পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করার কথাও কেউ কেউ বলছেন। তবে রাষ্ট্রীয় তথা আন্তর্জাতিক স্তরের এমন একটি ইস্যুতে দলীয় তদন্ত করা হাস্যকর হবে বলে বেশির ভাগ নেতা মনে করেন। তাঁদের মতে, এ ব্যাপারে সরকার যা করার করুক।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যাতে নির্যাতিত না হয় সে জন্য সেখানে একটি নিরাপত্তা অঞ্চল তৈরির ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি রেড ক্রিসেন্ট, ওআইসি, আসিয়ানভুক্ত দেশ ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।