রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘের কাছে নোবেলজয়ীদের খোলা চিঠি
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি মানবিক সংকট নিরসনে জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে খোলা চিঠি লিখেছেন ১২ নোবেলজয়ী এবং ১৮ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
আজ (বুধবার) ঢাকার ইউনূস সেন্টার থেকে গণমাধ্যমে চিঠির কপিটি পাঠানো হয়। চিঠিতে নিরীহ রোহিঙ্গা নাগরিকদের ওপর অত্যাচার বন্ধ এবং রাখাইনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি উদ্ভূত সংকট মোকাবিলায় সাত দফা সুপারিশও তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলো হলো:-
১. আনান কমিশনের সদস্যদের নিয়ে অবিলম্বে একটি ‘বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করা যার কাজ হবে কমিশনের সুপারিশগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন তত্ত্বাবধান করা।
২. দেশটি থেকে শরণার্থীর প্রবাহ বন্ধ করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ।
৩. আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নিয়মিতভাবে পীড়িত এলাকাগুলো পরিদর্শন করতে আমন্ত্রণ জানানো।
৪. যেসব শরণার্থীরা ইতিমধ্যে দেশ ত্যাগ করেছে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করা।
৫. ফিরে যাওয়া শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য জাতিসংঘের অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপন।
৬. বাস্তবায়ন কমিটির কর্তৃত্বে আনান কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ মোতাবেক রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান।
৭. রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অবাধে চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী নোবেলজয়ীরা হলেন: প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, মেইরিড মাগুইর, বেটি উইলিয়ামস, আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, অসকার আরিয়াস সানচেজ, জোডি উইলিয়ামস, শিরিন এবাদি, লেইমাহ বোয়ি, তাওয়াক্কল কারমান, মালালা ইউসুফজাই, স্যার রিচার্ড জে. রবার্টস, এলিজাবেশ ব্ল্যাকবার্ন।
স্বাক্ষরকারী বাকি ব্যক্তিত্বরা হলেন: মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়েদ হামিদ আলবার, ইতালির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমা বোনিনো, ব্যবসায়ী নেতা ও সমাজসেবী স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, নরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হারলেম ব্রান্ডটল্যান্ড, উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী মো. ইব্রাহীম, মানবাধিকার কর্মী কেরি কেনেডি, লিবীয় নারী অধিকার প্রবক্তা আলা মুরাবিত, ব্যবসায়ী নেতা নারায়ণ মূর্তি, থাইল্যান্ডের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাসিত পিরোমিয়া, আসিয়ানের সাবেক মহাসচিব সুরিন পিটসুয়ান, ব্যবসায়ী নেতা পল পোলম্যান, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যারি রবিনসন, ব্যবসায়ী নেতা ও সমাজসেবী জোকেন জাইটজ, অভিনেতা ফরেস্ট হুইটেকার, জাতিসংঘ সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন্স নেটওয়ার্ক পরিচালক জেফরে ডি. সাচ, অভিনেতা ও অ্যাক্টিভিস্ট শাবানা আজমি, কবি ও গীতিকার জাভেদ আক্তার এবং পাকিস্তান হিউম্যান রাইটস কমিশনের সাবেক চেয়ার আসমা জাহাঙ্গীর।
এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মানবিক সমস্যা নিরসনে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি অপপ্রচার, ঘৃণা ও সহিংসার উস্কানি বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সহিংসতা বন্ধের দাবি জানান।