মিয়ানমারের কাছে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অগ্রহণযোগ্য

রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে বিশ্বজুড়ে যখন নিন্দার ঝড় বইছে, তখন মিয়ানমারের সরকার এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের চিন্তা-ধারা ঠিক বিপরীত। তাদের কাছে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অগ্রহণযোগ্য। মিয়ানমারে যে কোন মানুষের সাথে কথা বললে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি তারা উচ্চারণই করবে না।

অধিকাংশ মানুষ মনে করে রোহিঙ্গারা ‘বাঙালী’। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, তারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সে দেশের নাগরিক মনে করে না। মনে করা হয়, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে এসেছে। তাদের ভাষা এবং সংস্কৃতি ভিন্ন। বিশ্বজুড়ে রোহিঙ্গা সংকটকে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবিক পরিস্থিতি হিসেবে দেখা হলেও মিয়ানমারের ভেতরে বিষয়টিকে দেখা হচ্ছে সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন হিসেবে। রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযানের প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন আছে মিয়ানমারের ভেতরে। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যমও সরকারী ভাষ্য অনুযায়ী কথা বলছে। মিয়ানমারের অধিকাংশ মানুষ মনে করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম একপেশে সংবাদ পরিবেশন করছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বেশি।

কিন্তু রাখাইন রাজ্যে অন্যরা সহিংসতা থেকে বাঁচতে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেভাবে পালিয়ে এসেছে সেটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে আসছে না। বিষয়টিকে এভাবেই দেখছে সেখানকার অধিকাংশ মানুষ। রাখাইনের সংঘাত কবলিত এলাকাগুলোতে গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার খুবই সীমিত। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যমে প্রধান পাচ্ছে রাখাইনে ‘সন্ত্রাসী হামলার’ বিষয়টি। সেজন্য ‘বাঙালী সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সন্ত্রাসীরা গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে। রোহিঙ্গারা যে বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে সে সংক্রান্ত কোন খবর নেই মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যমে। মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দিয়েছে যে ‘সন্ত্রাসী’ শব্দটি ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। রোহিঙ্গাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব মিয়ানমারে নতুন কিছু নয়। তাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয় না।

মিয়ানমারের ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে রোহিঙ্গাদের বিবেচনা করা হয় না। রোহিঙ্গারা যে ভাষায় কথা বলে সেটি রাখাইন অঞ্চলে অন্য জাতিগোষ্ঠীর ভাষার চেয়ে আলাদা। মিয়ানমারের জাতীয়তাবাদীরা রোহিঙ্গাদের হুমকি মনে করে। তারা যে বিষয়টি প্রচারণা চালিয়েছে সেটি হচ্ছে – মুসলমান পুরুষরা চারজন স্ত্রী রাখতে পারে। ফলে তাদের অনেক সন্তান থাকে। অনেক রাখাইন মনে করে, যেভাবে মুসলমানদের জনসংখ্যা বাড়ছে, এর ফলে তারা একসময় রাখাইন অঞ্চল দখল করে নেবে। মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে এ ধারণা পাওয়া যায়।

এক নারী বলছিলেন, ” তাদের কোন লেখাপড়া নেই। তারা কোন চাকরী পায়না । তাদের অনেক সন্তান।”

“আপনার প্রতিবেশীর যদি অনেক বাচ্চা থাকে এবং তারা যদি পাশের বাড়িতে গিয়ে শোরগোল করে , আপনি কি তাদের পছন্দ করবেন?” প্রশ্ন করেন আরেকজন নারী। তিনি বলছিলেন, এক হাতে তালি বাজে না। ঘটনার অন্যদিকও আছে। তবে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল কিছু মানুষ আছে। কিন্তু তারা ততটা সরব নয়। একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার বলেন, ” আমার মনে হয় বহু বাঙালী মুসলমান মারা গেছে। আমার হয়, সরকারী সৈন্যরা তাদের অনেককে হত্যা করেছে। আমার মনে হয়, জাতিসংঘের এখানে জড়িত হওয়া উচিত।”