রোহিঙ্গাদের সেফ জোন গঠনে বিশ্বের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান

ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সীমান্তের মিয়ানমার অংশে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি ‘সেফ জোন’ গঠনের জন্য বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। রোববার কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়িপ এরদোয়ানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় এ আহ্বান জানান।

আস্তানার প্যালেস অব ইনডিপেনডেনসে ওআইসির প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক বিষয়ক সম্মেলনে অংশ নেয়ার সময় বৈঠকে বসেন দুই রাষ্ট্রপতি। এর আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্স শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রসের (আইসিআরসি) মাধ্যমে সম্প্রতি মিয়ানমার সরকারকে ‘সেইফ জোন’ প্রতিষ্ঠার ওই প্রস্তাব দেওয়া হয়।

রোববার বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমার সীমানার অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সেইফ জোনে থাকতে পারে সে উদ্যোগ নিতে ওআইসিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। নাগরিকত্বের অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। এই জনগোষ্ঠী অস্তিত্বের সঙ্কট, নিষ্ঠুরতা এবং উৎখাতের শিকার।’

‘সেফ জোনের’ পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘মিয়ানমারের এই সমস্যাকে এমনভাবে সমাধান করতে হবে যাতে রোহিঙ্গারা নিজের ভূমি রাখাইনে নিরাপত্তা এবং মর্যাদার সাথে ফিরে গিয়ে থাকতে পারে। এটা নিশ্চিত করতে আমি ওআইসি’র সদস্য রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাই।’ তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে আবদুল হামিদ বলেন, গত ২৫ অগাস্টের পর থেকে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। তাদের আসা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের সাময়িক আশ্রায় দিচ্ছে।

কিন্তু ‘অতি জনবহুল’ দেশ বাংলাদেশের জন্য এই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ যে একটি বড় সমস্যা, সে কথাও রাষ্ট্রপতি তুলে ধরেন। ‘রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে মর্যাদা ও নিরাপত্তার সাথে বাস করতে পারে সে ব্যাপারে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগের জন্য তিনি ওআইসিসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থাকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।’ ওআইসসির সদস্য রাষ্ট্রগুলো রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য ফোন করায় এবং তুরস্কের ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে বাংলাদেশ সফর করায় বৈঠকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি হামিদ। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ওআইসির চলমান সম্মেলনে একটি বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করার জন্যও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার স্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে সহযোগতিার জন্য বৈঠকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তুরস্ক সবসময় রোহিঙ্গা জনগণের পাশে আছে। ইতোমেধ্য এক হাজার টন খাদ্য সহায়তা পাঠানো হয়েছে। আরও দশ হাজার টন ত্রাণ পাঠানো হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও সংস্থা যাতে বাংলাদেশের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ পাঠায় সে উদ্যোগ নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।

পররাষ্ট্র সচিব (দ্বিপাক্ষিক) কামরুল আহসান, কাজাখস্তানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসুদ মান্নান, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সরোয়ার হোসেন, প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।