ফরিদপুরে পাটের বাম্পার ফলন : ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ কৃষক

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পাট চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে পাটের কচিপাতা দুলে বাতাসে ঢেউ খেলছে আর কৃষকের স্বপ্ন দুলছে। জমি থেকে পাট কাটা, পানিতে জাঁক দেওয়া, আঁশ ছড়ানো, রোদে শুকানোর পর প্রক্রিয়াজাত করার জন্য কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাটের বাম্পার ফলনের পর কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। তবে বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

এলাকার কৃষকরা মূলত পাট চাষের উপর নির্ভরশীল। সোনালী আঁশ পাটের উৎপাদন ভান্ডার খ্যাত উপজেলায় চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ পাটের আবাদ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ১০হাজার ১০হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০হাজার ২০হেক্টর। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় অর্জিত হয়েছে। উন্নতমানের বীজ, সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ এবং সেচ সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। পাট কেটে মাথায় করে এবং পরিবহণে করে নিয়ে দূরের জলাশয়ে জাঁগ দিতে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন । জমি থেকে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো, পানিতে ধোয়া শেষে বাড়ীর আঙ্গিনায় চলছে আঁড় বেঁধে রোদে শুকানোর কাজ।

আঁশ ছাড়াতে মহিলারাও সাহায্য করছেন। তবে হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রির করতে গিয়ে পাটের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষকদের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এলাকার কৃষকরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১২ থেকে ১৫ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে । পাটের প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৫শত টাকা পর্যন্ত। প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ হয়েছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে কৃষকদের খরচের টাকাও উঠছে না। তারা পাটের ন্যায্যমূল্য দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান।

এ ব্যপারে পাট ক্রেতারা জানান, পাট মিল মালিকরা পাট ক্রয় না করায় আমরা বাধ্য হয়ে কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পাট ক্রয় করছি। এমতাবস্থায় কৃষকরা পাটের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে তারা চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন। এব্যাপারে উপজেলার সাউতিকান্দা গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিন জানান, তিনি ৪ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ফলন হয়েছে ৮ থেকে ১০ মন। বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৪ শত টাকা। সার, বীজ, নিরানী ও পাট কাটার জন্য কামলা খরচ বাবদ সব মিলিয়ে খরচের টাকাও উঠছে না। উপজেলার বামন কান্দা গ্রামের বরগা চাষী রবিউল, চেীকিঘাটা গ্রামের ক্ষুদ্র চাষি আমির হোসেন জানান, তারা গ্রাম থেকে দাদনের টাকা নিয়ে পাট চাষ করে খরচের টাকাও উঠেনি এজন্য দেনা গ্রস্থ হয়ে তারা হতাশ হয়ে পরেছেন। একই অবস্থা পাশ্ববর্তী গ্রামের অন্যান্য কৃষকদেরও। কয়েকজন কৃষক এ প্রতিনিধির কাছে বলেন, সরকারী ব্যাংক গুলো কৃষকদেরকে কোন কৃষি লোন দেন না।বাধ্য হয়ে তারা এজিওর কাছ থেকে ও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পাট চাষ করে সেই টাকা শোধ না করতে পেরে পরেছেন বিপাকে।

এ ব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার, মো: ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ভাঙ্গা উপজেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমাদের এ বছরের টার্গেট ছিল ১০ হাজার ১শত হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ, অর্জিত হয়েছে ১০ হাজার ২০ হেক্টর। মোটামুটি অর্জিত আমাদের হয়েছে। পাটের এবার ব্যবসাও ভালো এবং এ কাজটা সম্ভব হয়েছে আমাদের এবং আমাদের মাঠ কর্মী যারা উপ-সহকারী কর্মকর্তা আছেন তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। কৃষকদের সঠিক পরামর্শ প্রদান করে তারা সুষম সার ব্যবহার করতে পারছে জমিতে এ কারণেই পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। ।

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি