কি পরিচয় ছিল ‘দুর্ধর্ষ জঙ্গি’ আব্দুল্লাহর?
ঢাকার মিরপুরের মাজার রোডের একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া র্যাবের অভিযানের এখন চলছে তল্লাশি পর্যায়। কিছুক্ষণ আগে বাড়িটি থেকে বেরিয়ে এসে র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের বলেন, বাড়িটির ভেতরে তিনটি পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ পড়ে রয়েছে।
এর আগে, গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে বাড়িটির ভেতরে বিকট বিস্ফোরণ হয় এবং র্যাবের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, ভেতরে থাকা ‘জঙ্গিরা’ আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। ওই বিস্ফোরণে বাড়িটিতে যে অগ্নিকাণ্ড সৃষ্টি হয় তা নেভাতে খবর দেয়া হয় ফায়ার সার্ভিস। র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয় এটি ছিল ‘রাসায়নিক বিস্ফোরণের মত’। তারপর রাতের মতো অভিযান শেষ করে আজ (বুধবার) সকাল থেকে শুরু হয় বাড়িটিতে তল্লাশি অভিযান।
সোমবার রাত থেকে মিরপুরের মাজার রোড সংলগ্ন এলাকায় ‘কমল প্রভা’ নামে এই বাড়িটি ঘিরে রেখেছিল র্যাব। ভেতরে থাকা সন্দেহভাজন জঙ্গিদের সম্পর্কে সাংবাদিকদের র্যাব কর্মকর্তারা জানান, এরা হচ্ছে ‘দুর্ধর্ষ জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ, তার দুজন স্ত্রী, দুই সন্তান এবং দুই সহযোগী। র্যাবের প্রধান বেনজির আহমেদের বরাত দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দৈনিক প্রথম আলোর সংবাদদাতা লিংকন মোহাম্মদ লুৎফুজ্জামান সরকার জানান, আব্দুল্লাহ ২০০৫ সাল থেকে জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত। সে ফ্রিজ মেরামত ও আইপিএস তৈরির পেশার আড়ালে বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরকের মজুদ গড়ে তুলেছিল।
কিন্তু ওই এলাকার অন্যান্য বাসিন্দাদের সাথে কথাবার্তা বলে পাওয়া যাচ্ছে ভিন্ন বক্তব্য। র্যাব বাড়িটিতে তাদের চূড়ান্ত অভিযান শুরু করার আগেই বাড়িটির অন্যান্য ফ্ল্যাট এবং আশপাশের বাড়িগুলো ফাঁকা করে ফেলে।
‘কমল প্রভা’ নামের ওই বাড়িটির ঠিক পিছনের বাড়িতেই সপরিবারে থাকেন ব্যবসায়ী বজলুর রহমান। তাকে তার পরিবার সহ গতকাল সকাল দশটার পর ওখান থেকে সরে যেতে বলে র্যাব। তার আগের রাতটি মি. রহমানের পরিবারের কেটেছে তীব্র আতঙ্কে। মুহুমুর্হু গুলি আর বোমা বিস্ফোরণের শব্দে তারা কেঁপে কেঁপে উঠছিলেন বলে জানান। তিনি বলেন, আব্দুল্লাহরা ওই বাড়িতে দশ-বারো বছর ধরে আছে। প্রতিবেশী হিসেবে তাদেরকে এলাকার অনেকেই কম বেশী চিনতো।
আব্দুল্লাহর বড় ভাই খোকার ছিল আইপিএস সরবরাহের ব্যবসা। তার পুরো নাম জানা সম্ভব হয়নি। সেই অভিযান চলাকালে বাড়িটিতে ছিল কিনা তাও জানা যায়নি। তার ছিল দীর্ঘ বাবরি চুল। মি. রহমান তার নিজের বাড়ির আইপিএসটিও খোকার কাছ থেকেই নিয়েছেন। আর আব্দুল্লাহর পেশা ছিল কবুতর বেচাকেনা। বাড়ির ভেতরেই সে বিরাট কবুতরের খামার গড়ে তুলেছিল। সে ছিল হালকা পাতলা গড়নের। তারা নামাজ পড়ত। দুভাইয়েরই দাঁড়ি ছিল। কিন্তু আব্দুল্লাহ যে জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি বলে জানাচ্ছেন মি. রহমান।
অথচ এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযানে নিহত কিংবা ধৃত ‘জঙ্গিদের’ চরিত্র সম্পর্কে যা জানা যায়, বেশীরভাগই অন্তর্মুখী স্বভাবের। বাইরের মানুষের সাথে মেশার নজির কারোই খুব একটা নেই। কিন্তু আব্দুল্লাহ কিংবা তার ভাই খোকা এলাকাবাসীর সাথে নিয়মিতই কুশল বিনিময় করত বলে জানা যাচ্ছে। পাশের চা দোকানে চাও খেত মাঝে মাঝে। তবে তাদেরকে রাজনৈতিক কোন আলাপে যোগ দিতে দেখা যায়নি কখনো।
আজকের তল্লাশি অভিযানে বাড়িটির ভেতরে র্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ও ডগ স্কোয়াড ব্যবহার করা হচ্ছে। ভেতরে তিনটি মৃতদেহ পড়ে থাকার কথা নিশ্চিত করা হলেও এদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। র্যাবের মুখপাত্র মি. খান সাংবাদিকদের বলেছেন, মৃতদেহগুলো এতটাই পুড়ে গেছে যে সেগুলো সম্পর্কে এখনই কিছুই বলা যাচ্ছে না।