আড়ংয়ের প্রতারণার শিকার ক্রেতারা, ফেসবুক জুড়ে ক্ষোভ

ফেসবুকজুড়ে ক্ষোভ – নানা ঢং আর রঙের বাহারি পোশাকের পসরা সাজিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণায় মেতেছে রিটেইল চেইনশপ ‘আড়ং’। ক্রেতা চাহিদাকে পুঁজি করে একই পণ্যের নিত্যনতুন পরিবর্তন করে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে ব্র্যাকের এই প্রতিষ্ঠানটি। ‘আড়ং’য়ের এই অভিনব প্রতারণার চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে ক্ষোভ ঝেরেছেন ক্রেতারা। ‘আড়ং’র বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানোরও দাবি তুলেছেন কেউ কেউ।

জানা গেছে, ‘আড়ং’র বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ক্রেতাদের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণার খবর থাকলেও এবার তা ধরা পড়েছে স্বয়ং ক্রেতাদের চোখেই। গত রমজানের ১৫ রোজায় ২ হাজার ৩৬১ টাকার একটি পোশাক ২৫ রোজায় বিক্রি করেছে ৪ হাজার ২৫২ টাকায়। ঈদুল ফিতরের আগে করা এই প্রতারণার বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মোহতারিমা শিমলী নামের এক ক্রেতা।

চলতি বছরের ৯ জুলাই তার ফেসবুক টাইমলাইনে এ প্রতারণা নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আড়ং নিয়ে নেগেটিভ কিছু কখনও লিখবো আগে ভাবিনি। হয়তো বা পোস্টটার জন্য অনেক কথাও শুনতে হবে যেমন: আমার মতো কাস্টমারের জন্যই আড়ং সুযোগ নিচ্ছে। সেই ছোটোবেলা থেকে আব্বু, চাচা, মামাদের দেখেছি আড়ংয়ের জামা কিনে দিতে। মান ভালো, সাইজ সবার জানা, পড়ে আরামদায়ক এবং সাশ্রয়ী হওয়ায় ঈদে উপহার দেয়ার জন্য আড়ং ছিলো বেস্ট। আমরা আড়ংয়ের নিয়মিত ক্রেতা।

‘কিন্তু এবার ঈদে শপিং করে খুব ডিসঅ্যাপয়েন্টেড (হতাশ) হতে হলো। যমুনা ফিউচার পার্কের কাছে বাসা হওয়ায় ১৫ রোজা থেকে প্রতিদিন আড়ং এ যাওয়া হয়েছে। শ্বশুর বাড়ি-বাবার বাড়ির ৯৫ শতাংশ কেনাকাটা আড়ং থেকেই করেছি। এমনকি ৯০ শতাংশ গিফটও আড়ং থেকেই পেয়েছি। যাই হোক, ১৫ রোজার দিকে আমার ভাবি একটা সেলোয়ার কামিজ কেনেন, যার দাম ২ হাজার ৩৬১ টাকা। ২৫ রোজার পর সেটাই ৪ হাজার ২৫২ টাকায় বিক্রি করে আড়ং।’

শিমলী ফেসবুকে আরো লেখেন, ‘জামাটি প্রথমে দেখেই চিনে ফেলি এবং কমপ্ল্যান করি যে ভুল ট্যাগ লাগানো কিনা! সংশ্লিষ্টরা চেক করে জানান ঠিক আছে। কাপড়, কালার এবং কাজ সব একই। কিন্তু দামই ভিন্ন!’ তিনি লিখেন, আমি আগেও অনেক শুনেছি ঈদের সময় শেষের দিকে নাকি আড়ং দামের ট্যাগ চেঞ্জ করে দেয়। যেহেতু এই সময় বাজেট একটু বেশি থাকে তাই বেশি দামের পণ্যের প্রতি ক্রেতারা ঝোকে। তবে আড়ং এর মতো ট্রাস্টেবল একটা সপ আমাদের সঙ্গে এমন প্রতারণা করবে আশা করিনি।

ফেসবুকে আড়ংয়ের প্রতারণার এ চিত্র তুলে ধরলে মোহতারিমা শিমলীর ওই পোস্টটি লাইক দিয়েছেন এক হাজার ৭০০ জন ও শেয়ার করেছেন ৯০২ জন। আর প্রতারণায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মতামত দিয়েছেন আরও ৩১৪ জন। তাদেরই একজন শবনম আরাবি; ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, কথায় বলে ‘পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে’ ওদের মনে হয় ওই সময় চলে আসছে। দুর্নীতির চরমসীমায় পৌঁছে গেছে আড়ং।

মুনজুরুল কাদির লিখেছেন, ‘প্রাথমিক চিকিৎসা হলো যার যার হাতের ক্ষমতা প্রয়োগ। তাতেই আড়ং এর লম্বা জিহ্বা কর্তন হবে। এখানে লোভ রোগে আক্রান্ত গ্রাহক নয়, আড়ং।’ সানজিদা আহসান লিখেছেন, ‘সেম কাহিনী আমারও। একটা ড্রেস কিনি আমার ননদের জন্য ৩২০০ টাকা দিয়ে। ২৮ রোজায় হাজবেন্ডের অফিস থেকে ওই সেম ড্রেস সেম সাইজ দিলো। আমি তো মহা খুশি। পরে ট্যাগে দেখি ৫ হাজার ১০০ টাকা। খুবই অবাক হয়েছিলাম। আজকে আপনার পোস্ট দেখে শিওর হলাম যে, এই কাজ ওরা করে।’

একই পোস্টের কমেন্টসে ক্ষোভ ঝেরেছেন নাজিয়া আহমেদ নামে আরেক ক্রেতা। তিনি লিখেছেন, ‘আড়ং শুধু একটা নাম। এর কোয়ালিটি এখন ফুল জিরো। আগে যাও ন্যূনতম কোয়ালিটি থাকতো!’ রায়হান মিল্টন লিখেছেন, ‘৪ হাজার টাকাতে পাঞ্জাবি কিনে ঈদের দিন শুধু পড়েছি। তারপর এক ধোয়াতেই আড়ংয়ের আসল রং বের হয়ে গেছে।’

১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যাকের সহযোগী হস্ত ও কারুশিল্প ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘আড়ং’। বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ একাধিক শহরে আড়ংয়ের শাখা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিন নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশুদের পোশাক, নকশী কাঁথা, জুয়েলারি ও গৃহ সাজসজ্জার নানা পণ্য বিক্রি করে। নতুন করে হস্তশিল্পের মধ্যে মৃৎ শিল্পও যুক্ত হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, দেশের বিভিন্নস্থানে আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গ্রামের নারীদের মাধ্যমে এসব পোশাক নামমাত্র দামে সংগ্রহ করে আড়ং। কিন্তু তা তাদের শোরুমে ঢুকিয়েই কারসাজির মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে উচ্চ মুনাফা। এদিকে গত বছরের ১৯ জুন উচ্চমূল্যে লেহেঙ্গা বিক্রির অভিযোগে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মিমি সুপার মার্কেটের ‘আকর্ষণ’ নামে একটি দোকানে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

তখন দোকান সংশ্লিষ্টরা বাড়তি মূল্যের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ১৫ হাজার ৯০০ টাকায় কেনা লেহেঙ্গাটি সাড়ে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন তারা। এ ঘটনায় ওই দোকানের মালিককে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। অতিরিক্ত মূল্য রাখাসহ ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করায় ‘আড়ং’য়ের বিরুদ্ধেও এ ধরনের অভিযান চালানোর দাবি জানিয়েছেনে অনেক ক্রেতা।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘জি’ ব্লকের বাসিন্দা সামিনা সুলতান‍া বলেন, উৎসবকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত মূল্য রাখা ও নিম্নমানের পণ্য দিয়ে গ্রাহক ঠকানোর দায়ে আড়ংসহ ঢাকার শপিং মলগুলোতেও এ ধরনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা জরুরি হয়ে ওঠেছে। ‘নিয়মিত মনিটরিং ও অভিযান চালালে বাড়তি মূল্যের লাগাম টেনে ধরা কিছুটা সম্ভব হবে,’ যোগ করেন গুলশান-২ এর বাসিন্দা বেসরকারি চাকুরে আবদুল্লাহ আল মামুন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ‘আড়ং’র হেড অব মার্কেটিং অফিসার তানভীর হোসেন বলেন, ‘ইট’স নট রিয়েল। আমরা এ ধরনের কাজ করি না।