রোহিঙ্গা নিপীড়ণের নানা বিষয় নিয়ে ইমপ্যাক্ট টকে সাত্তার ইসলাম

রোহিঙ্গা নিপীড়ণের নানা বিষয় নিয়ে ইমপ্যাক্ট টক এ এবার অতিথি হয়ে এসেছেন সাত্তার ইসলাম। ইমপ্যাক্ট টকের এই পর্বে তিনি তুলে ধরেছেন রোহিঙ্গা নিপীড়ণের কিছু অজানা তথ্য।

সাত্তার ইসলাম, একজন নিপীড়িত রোহিঙ্গা। গত ২৬ বছর ধরেই তিনি বাংলাদেশ কক্সবাজারের কুতুবালং নামক একটি রোহিঙ্গা ক্যম্পে রয়েছেন। ২৬ বছরে এখনও নিজ জন্মস্থানে ফিরে যেতে পারেননি তিনি। এছাড়া বঞ্চিত হয়েছেন শিক্ষার অধিকার থেকে। কিন্তু বর্তমানে তিনি অষ্টম শ্রেণীর একজন ছাত্র। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাথেও তার যোগাযোগ রয়েছে।

ইমপ্যাক্ট টকের এই পর্বে আসতে নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, যখন তাকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে যেতে হয় তখন তাকে বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রধানের অনুমতি নিতে হয়। এছাড়াও অনুমতি নিতে হয় পুলিশের। তার একটি নির্দিষ্ট রোহিঙ্গা পরিচয় পত্র রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, জন্মের পরপরই মায়ানমার থেকে তাকে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল তার পরিবার। কারণ মায়ানমারে মুসলিমদের ওপর চলছিল ভয়ানক নির্যাতন। মুসলিমদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, তাদের ছোট নবজাতক শিশুদের পুড়িয়ে মারা, নারীদের ধর্ষণ করে পরে তাদের হত্যা করা সহ ভয়ানক নির্যাতন করেছিল মায়ানমার সরকার। তাই তাকে বাঁচাতে বাংলাদেশে চলে এসেছিল তার পরিবার। এছাড়াও, মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি এবং আরাকান সরকারের মতে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে এটি সত্য যে, রোহিঙ্গারা মায়ানমারের আরাকানের উত্তরাঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসী। কিন্তু তারপরও অর্ধশতাব্দী ধরে, মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করেছে।

এক ঘটনাড় কথা উল্লেখ করে সাত্তার বলেন, দুই তিনজন রোহিঙ্গা দুষ্কৃতিকারী এক রাখাইন নারীকে ধর্ষণ ও হত্যা করে।  এর জের ধরে ২০১২ সালের জুন মাসে শুরু হয় রাখাইন-রোহিঙ্গা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এক পর্যায়ে, মায়ানমারের সামরিক বাহিনী ও রাখাইন বৌদ্ধ মৌলবাদীরা মিলে রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত ধোলাই শুরু করে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ছাড়া নিপীড়িত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ সরকারের নতুন করে আরো রোহিঙ্গা শরণার্থী গ্রহণের অনিচ্ছার কারণে উদ্বাস্তু রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে না। তবে, বাংলাদেশ সরকার বিজিবির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যতটুকু সম্ভব ছিল প্রবেশ করতে দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারকে তিনি ধন্যবাদ জানান।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার নানা ভাবে আমাদের সাহায্য করেছে। বাংলাদেশ সরকার স্থান না দিলে হয়ত অনেক রোহিঙ্গায় আজ আত্যাচারে, নিপীড়নে মারা যেত। বাংলাদেশ সরকার শুধু প্রবেশের সুযোগ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেনি,আমদের বাসস্থানের জন্যও ব্যাবস্থা করেছে এবং আর্থিকভাবেও আমদের সহযোগিতা করেছে।

বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।