মুন্সীগঞ্জে বন্যার পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দী হাজরো পরিবার

মুন্সীগঞ্জে পদ্মার ভাঙ্গনে তিনশত বছরের পুরনো বড়াইল জামে মসজিত এবং শত বছরের বড়াইল ৭নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিলীন হয়েছে। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে জেলার লৌহজং, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার চরালের নিচু গ্রামগুলো।

দুই উপজেলায় বন্যার কয়েক দিনের মাথায় পদ্মায় বিলীর হয়ে যায় কয়েক শ’ ঘরবাড়ি ও দোকান পাট। এক তো বন্যা তার উপর নদী ভাঙ্গন, এই নিয়ে পদ্মার পারের মানুষেরা এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এরই ফলে পানি বন্দী হয়ে পড়েছে জেলার কয়েকটি গ্রামের হাজারও পরিবার। শুধু তাই নয় এলাকার রাস্তা-ঘাট বন্যার পানিতে ডুবে রয়েছে। পানি বন্দীতে কর্ম বিমুখ হয়ে পড়েছে এলাকার হাজারও লোক। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে প্রস্তুত থাকতে হয় বন্যাকবলিদের। সন্ধ্যার হওয়ার সাথে সাথে পানির উচ্চতা স্রোতের বেগ বেরে যায়। সব চেয়ে খারাপ অবস্থা গবাদি পশুর। খাদ্যের অভাবে গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে কৃষকরা। এরই সাথে রয়েছে পানিতে ভেসে আশা বিষাক্ত সাপের ভয়।

এর মধ্যে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার হাসাইল, বানারী, পাচনখোলা, নগর যোয়ার, পাঁচগাঁও ও কামারখাড়া বড়াইল এলাকায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার কামারখাড়া ইউনিয়নের বড়াইল গ্রামরে বাসবাড়ির তিনশত বছরের পুরনো বড়াইল জামে মসজিদ এবং শত বছরের বড়াইল ৭নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পদ্মায় বিলীন হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার কামারখাড়া ইউনিয়নের বড়াইল গ্রামের সিমা বেগম (৪০) বলেন, বিগত ৩ মাস আগে বালিগাঁও আমার শশুর বাড়িতে ছিলাম। সেখানে পদ্মায় আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে যায়। মাস দু’য়েক আগে বাপের বাড়ি বড়াইলে এসে বাড়ি বানালে সেখানেও সর্বনাশা পদ্মার ¯্রােতে বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। এতে ছেলে সন্তান নিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করছি।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে গরু ছাগল নিয়ে সমস্যায় পড়েছি। বিক্রি করতে গেলেও তার ন্যায্য মূল্য পাচ্ছিনা। বাড়ি-ঘর সব মিলিয়ে প্রায় ১১ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানির কারণে এলাকার মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে আমার মেয়ে প্রায় ১৫দিন ধরে কলেজে যেতে পারছে না।

কামারখাড়া ইউনিয়ন চেয়াম্যান মো. মহিউদ্দিন হালদার বলেন, এলাকায় বন্যাকবলি মানুষের কাছে আমি গিয়েছি। তাদের সমস্যার সমাধানের জন্য আমি কাজ করছি। দুংখজনক হলেও সত্যি যে, বড়াইল গ্রামের তিনশত বছরের ঐতিহ্যবাহী পুরনো বড়াইল জামে মসজিদ নদী ভাঙ্গনে পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। এর কয়েক মাস আগে শত বছরের বড়াইল ৭নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাদ্মা নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যায়।

অন্যদিকে বানের পানি প্রবেশ করায় লৌহজং উপজেলার তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এতে বিদ্যালয়েল সমাপনীর মডেল টেস্ট সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে। লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ, তেউটিয়া, কনকসার, বেজগাঁও, গাঁওদিয়া, কলমা-ধাইদা ছয়টি ইউয়নিয়নের কুমারভোগ, খরিয়া, রানীগাঁও, কোরহাটি, তেউটিয়া, ঝাউটিয়া, পাইকারা, সাইনহাটি, ব্রাক্ষনগাঁও, সিংহেরহাটি, বেজগাঁও চর, ছত্রিশ, সুন্দিসার, গাঁওদিয়া, শামুরবাড়ি, হাড়িদিয়া, রানাদিয়া, পাখিদিয়া, কলমা, ডহরী, পূর্বভরাকর, পশ্চিম ভরাকর, কলমা ও বিধুয়াইলসহ প্রায় ২৫টি গ্রাম পানি বন্ধি রয়েছে।

এদিকে বন্যার পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় উপজেলার মেদিনীমন্ডল ইউনিয়নের যশলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলমা ইউনিয়নের ডহরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কুমারভোগ ইউনিয়নের শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

টঙ্গীবাড়ি ও লৌহজং-২ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন (এমিলি) কাছ থেকে জানাযায় , বন্যাকবলিত মানুষ সুরক্ষা এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ বন্যার্ত পরিবারের হাতে পৌছানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা ইতিপূর্বে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ পৌঁছেয়েছেন।

আব্দুল্লাহ আল-মাসুদ,মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিদি