কাউন্টার টেরোরিজমের গোয়েন্দা তৎপরতায় ‘আগস্ট বাইটের’ সমাপ্তি

আজ মঙ্গলবার ভোর থেকে পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের পশ্চিম পাশে ছয় নম্বর ভবনটি ঘিরে ফেলে পুলিশ। হোটেল ‘ওলিও ইন্টারন্যাশনাল’-এর চারতলায় ৩০১ নম্বর কক্ষে একজন জঙ্গি অবস্থান নিয়েছেন বলে জানতে পারে পুলিশ। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ওলিও হোটেলের চারতলা ভবনে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বহুতল ভবনটির একটি ফ্লোরের দেয়াল ধ্বসে পড়ে। ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে ৯টা ৫০ মিনিটের মধ্যে কয়েকবার গোলাগুলির আওয়াজ ও আসে। পরে ওই রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে আটকে পুরো এলাকায় ঘিরে রাখেন পুলিশ ও পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটের সদস্যরা।

মঙ্গলবার সকাল থেকে ওই জঙ্গিকে আত্মসমর্পণের জন্য বলা হলেও সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় সে। এতে হোটেলের দরজা, রেলিং ও কাঁচ ভেঙে পড়ে। এ সময় পুলিশ ওই জঙ্গিকে সুইসাইডাল ভেস্ট ও ব্যাগপ্যাকসহ দেখতে পায়। এক পর্যায় পুলিশ ও জঙ্গির মধ্যে পাল্টা গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

গোলাগুলির ফলে ডিবি পুলিশের একটি গাড়িও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গোলাগুলির পরে ১১ টা ৪৫ মিনিটে ঐ জঙ্গি দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বেশ কিছু সংখ্যক বোমার স্পিলটার উদ্ধার করে। ঘটনাটি তদন্তে সেখানে ডিবি, ৱ্যাব ও গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ তদন্ত বাহিনী উপস্থিত ছিলেন।

কাউন্টার টেরোরিজমের গোয়েন্দা তৎপরতায় 'আগস্ট বাইটের' সমাপ্তি

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শোক দিবসে ৩২ নম্বরে যে মিছিল-সমাবেশ হবে তাতে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেছিল ওই জঙ্গি। গতকাল থেকেই এ ধরনের তথ্য পেয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ। এ জন্য সোমবার সারারাত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালানো হয় ও অনেক সন্দেহজনক ব্যক্তিদের ফলো করা হয়।’

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, হোটেলের যে কক্ষে বিক্ষোরণ ঘটেছে, আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এক যুবক সোমবার রাতে সেটি ভাড়া নেয়। আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে হামলা হতে পারে। এ কারণে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াই।

তিনি আরও বলেন, ‘ওই জঙ্গিকে আত্মসমর্পন করতে আনেকভাবে বলেছি। কিন্তু সে আত্মসমর্পন করেনি। পুলিশ বাধ্য হয়ে অপারেশনে গেছে। যখন পুলিশ অপারেশনে গেছে তখন সে একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কক্ষের দরজা ভেঙে ফেলে। দরজা ভেঙে সে আরেকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে তখন পুলিশ গুলি করতে বাধ্য হয়। তার সঙ্গে সুসাইডাল ভেস্ট ছিল, ব্যাগপ্যাক ছিল তা দিয়ে সে নিজে আত্মঘাতী হয়েছে। এতে কক্ষের জানালা, বারান্দা উড়ে গেছে। বোঝা যাচ্ছে এটি শক্তিশালী বিস্ফোরক। এটা যদি কোনও জনসমাবেশে বিস্ফোরণ হতো তাহলে বড় ধরণের ক্ষতি হতো। আমাদের কাউন্টার টেরোরিজমের গোয়েন্দা তৎপরতার কারণে এই বিপদ থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছে।’

এছাড়াও তিনি জানান, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এখনও অনেক জঙ্গি রয়েছে। আমরা তাদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি অতি শীঘ্রই আমরা তাদের গ্রেফতার করতে পারবো। বর্তমানে ঘটনাস্থলের সকল পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং এম্বুল্যেন্সে করে নিহত জঙ্গির লাশ নিয়ে যাওয়া হয়।