কুড়িগ্রামে জেপি এমপি’র বাড়ি রক্ষায় কোটি টাকার প্রকল্প

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সৃষ্ট নদী ভাঙ্গন মোকাবেলায় সীমান্ত ঘেষা ‘জিঞ্জিরাম নদীর বামতীর রক্ষা প্রকল্পে’র নামে সরকারের কোটি টাকা উদ্দেশ্যহীন ভাবে ব্যয় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কার্যত বরাদ্দের এ অর্থ স্থানীয় সাংসদ রুহুল আমিনের বাড়ি রক্ষার কাজে ব্যয় হচ্ছে বলে এলাকার মানুষেরর মূখে মূখে শোনা যাচ্ছে।

জানা যায়, জেপি’র চেয়ারম্যান বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর দলীয় এমপি হওয়ায় বিশেষ বিবেচনায় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ঐ অর্থ তার অনুকুলে বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি আশ্র নেন। সরেজমিন প্রত্যক্ষকালে এলাকাবাসী জানান, প্রাক্কলন অনুযাই কাজ না করে বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগই উত্তোলন করে ভাগবাটোয়া করে নেয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু হলেন জাতীয় পার্টি জেপি’র চেয়ারম্যান। একই দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে রুহুল আমিন কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বিজয়ী হয়েছেন। এ সুযোগ ব্যবহার করে সাংসদ ওই মন্ত্রণালয়ের অধিনে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে প্রায় কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে আসেন। যে স্থানে ওই সাংসদের বাড়ি ঠিক তার উত্তর পাশেই সীমান্ত ঘেষা জিঞ্জিরাম নদীর বাম তীর রক্ষা প্রকল্প গ্রহন করা হয়। গুরুত্বহীন জায়গায় এ প্রকল্প গ্রহন করায় স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয় ।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে জলবায়ু জনিত প্রভাব মোকাবেলায় রৌমারীর সীমান্ত ঘেষা বারবান্দা গ্রামে ‘জিঞ্জিরাম নদীর বাম তীর রক্ষা’ নামের প্রকল্পে ৯৬ লাখ ৫৯ হাজার ৭৩৯ টাকা বরাদ্দ আসে। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো নদীর বাম তীরে ২৪০ মিটার জুড়ে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে সিসি ব্লক ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা। এ প্রকল্পের আওতায় ৪৩ হাজার ব্লক, ৮ হাজার ৬শ’ ঘনমিটার মাটি এবং ৪ হাজার জিও ফিল্টার ব্যাগ ব্যবহার করার কথা। এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য নিধারিত ঠিকাদার ছিল আজমীর বিল্ডার্স । প্রকল্পের কাজ জুন মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এবং বরাদ্দকৃত অর্থও উত্তোলন করা হয়েছে।

প্রকল্প এলাকা উত্তর বারবান্দা গ্রামে গেলে মনির হোসেন নামের একজন বলেন, ‘যে স্থানে কাজ করা হয়েছে তার পাশেই এমপি সাহেবের গ্রামের বাড়ি। আর বাড়ির ভিটাজুড়ে প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। আমরা শুনছি এক কোটি টাকার কাজ এটি। যে ভাবে কাজ করা হয়েছে তাতে ২০ লাখ টাকাও খরচ হয়নি।’

সাইফুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি জেপি’র সভাপতির কাছ থেকে প্রকল্প বাগিয়ে এনে এমপি সাহেব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সমযোতা করে নামমাত্র কাজ করে সিংহ ভাগ টাকা পকেটস্থ করেছেন। অথচ এমপির বাড়ীর পার্শ্বেই বেশ কিছু বাড়ীঘর রয়েছে সে সব রক্ষায় এ প্রকল্পে কোন গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

জনৈক মশিউর রহমান বলেন, ‘নদীর তীরে মাটি কাটার কথা থাকলেও এক কোদাল মাটিও কাটেনি। যে পরিমাণ ব্লক ফেলানোর কথা তার অর্ধেক ফেলেছে কিনা সন্দেহ আছে। এমন কথা জানালেন অনেকেই। এ ছাড়াও কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এলাকার সচেতন মহল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কাজের মান নিম্ন হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা কয়েক দফা কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এমপি নিজেই। এমনকি এমপির সহায়তায় অভিযোগকারি গ্রামবাসিদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন ঠিকাদারের লোকজন। এতে প্রমাণিত হয় প্রকল্পের টাকার ভাগ এমপিও নিয়েছেন। তা না হলে এমপি এলাকাবাসির ওপর ক্ষিপ্ত হবার কথা নয়। 

প্রকল্প বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই প্রকল্পটি স্থানীয় এমপি অনেক তদবির করে অনুমোদন করে নিয়েছেন। আমরা কাজের দেখাশোনা করেছি, তাতে নিয়ম অনুসারেই কাজ করা হয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সাংসদ রুহুল আমিন বলেন, ‘গত কয়েক বছরে জিঞ্জিরাম নদীর ভাঙ্গনে অনেক ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের পুরাতন বাড়ির ভিটেমাটিও হারিয়ে গেছে। ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে আমার বাড়ি, বারবান্দা বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলানোর কারনে এ বছর ভাঙ্গেনি। আরো ৫শ’ মিটার কাজ হলে এলাকাটি রক্ষা পাবে।

মোঃ মনিরুজ্জামান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি