স্মৃতি আঁকড়ে থাকা ফরিদপুর মহিম স্কুলের সেই ৮৮তম ব্যাচ

দীর্ঘ ২৯ বছর পর দেখা ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামটে অবস্থিত মহিম ইনস্টিটিউশন এর ৮৮ ব্যাচের বন্ধুদের সাথে রাজধানী ঢাকার একটি চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে। উদ্যোগটি অবশ্য ইংল্যান্ড প্রবাসী তারেক এবং রাব্বির উদ্যোগে তবে বাস্তবায়ন এর ভূমিকায় ছিল ফাস্টবয় জুয়েল এবং চার্টার এ্যাকাউন্টেন্ট কবি নইকবাল রাশেদীন তরুণ। হঠাৎ করেই ইনবক্সে তরুণ এর ম্যাসেজ,কোথায় তুই? অফিসে যাচ্ছি। জানিস রাব্বি আর তারেক দেশে এসেছে? ওদের আহবানে অমরা ৮৮ এর ব্যাচের যারা ঢাকায় আছি তাঁরা সোমবার শ্যামলীর প্রিন্স চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে সন্ধ্যা ৭ টায় একত্রিত হচ্ছি। জানালো তরুণ।

খবরটি পেয়ে অনেক বড় কিছু পেতে যাচ্ছি মনে হলো। আফটার অল তারেক এবং রাব্বির সাথে দেখা হবে। অন্যরকম এক অনুভুতি অনুভব করছি। রয়েছে কাজের ভীষণ রকম ব্যস্ততা। সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে গভীর রাত হয়ে যায়। নতুন একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি যা নিয়ে প্রচন্ড ব্যাস্ততা আর নির্ঘুমরাত কাটাতে হচ্ছে প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে। তাতে কি ব্যস্ততা উপেক্ষা করে যেকোনভাবে পৌঁছতে হবে প্রিন্সে। সেই অনুযায়ী সব কাজ তার আগেই শেষ করার ব্যর্থ চেষ্টা। আবারও সন্ধ্যায় তরুণের ফোন। কিরে আসছিসতো ? অবশ্যই আসবো। দৃঢ়তার সাথে আমার তড়িৎ উত্তর। সেই অনুযায়ী খুব কাছের এক ছোট ভাই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার নাজমুলকে সাথে নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে সি এনজি করে শ্যামলীর আদাবরে হাজীর। আমার অপেক্ষায় রাব্বি,তরুণসহ বন্ধুরা। তখনও কিন্তু তারেক আসেনি। তবে আসবে। ঘড়ির কাটায় তখন ৯ টা পার হয়ে গছে।

এরই মধ্যে কর্ম ব্যস্ততা উপেক্ষা করে একে এক হাজীর হচ্ছে সব ৮৮ সালের ব্যাচ এর এস এস সির বন্ধুরা। রাব্বি এবং তারেক একসাথে পাড়ি জমিয়েছিল সাইপ্রাসে। তার পরে ওরা দুজনেই আলাদা হয়ে রাব্বি চলে চলে যায় পর্তুগালে আর তারেক চলে যায় ফ্রান্স।এখন ওরা দুজনেই থাকে ইংল্যান্ডে। প্রতি বছরে দেশে না এলেও অনেক দিন পর পর ওরা দেশে আসে। তারেক অনুষ্ঠান স্থলে আসা মাত্রই শুরু হলো জম্পেস আড্ডা। একই সাথে চলছে ডিনার। হাজারো স্মৃতি নিয়ে সবার মাঝে ব্যাপক টানাটানি। আলাপ আলোচনা পরিশেষে ৮৮ ব্যাচের যেসব বন্ধুরা অসময়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে তাদেরকে নিয়ে। চলে যাওয়াদের মধ্যে টুলকে নিয়েই ছিল বেশি সময় ধরে আলোচনা। কারণ টুলু কবি আব্দুস সাত্তার গুমানীর ছেলে এবং বেশ মেধাবী ছিল টুলু। ঐ সময় যে কয়জন ফাস্ট ডিভিশন পেয়েছিল তাদের মধ্যে টুলুও একজন। যদিও কাটায় কাটায় ও পেয়েছিল ৬শ’ নম্বর। স্বাভাবিক জীবন ছেড়ে নেশার জগতে হারিয়ে যাওয়া টুলু অসময়ে চলে গেলো।

এভাবেই দুঃখ করলো সাবাই। আলোচনা হলো আমরা আর কোন বন্ধুকে হারাতে চাই না। প্রথম পর্যায়ে ৮৮ ব্যাচের যারা ঢাকায় বসবাস করছে তাদেরকে বিভিন্নভাবে খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত হলো। কাজের দায়িত্ব কিছুটা আমার কাঁধে দিলো সবাই। আমিও কথা দিলাম আমরা যারা ৮৮ ব্যাচে ছিলাম তাদের নামের একটি তালিকা মহিম স্কুল থেকে তুলে এনে তরুণ এবং জুয়েলকে দেবো সেই সাথে একটি ফেসবুক পেজ এবং ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করা হবে। অনেক বছর পর দেখা হওয়াতে কথা-ই যেন শেষ হয় না। এক সময় ডিনার শেষ হলো। সবাই গ্রুপ ছবি তোলার জন্য চাইনিজ রেষটুরেন্টে সবচেয়ে উপযোগী জায়গা খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ছবিও তোলা হলো আমার ক্যামেরায়। অনেকে মোবাইল ফোনেও ছবি তুলেছে। তুলেছে সেলফিও।

অসম্ভব ভালো লাগার এক অসাধারণ মুহুর্ত ছিল বলা চলে এই আড্ডাটির পুরো সময় জুড়ে। মহিম স্কুলের ছাত্র না হলেও অনেকেই এসছে যারা আমাদের সাথে রাজেন্দ্র কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়েছে। কে কোথায় আছে তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে আমরা যারা ঢাকায় আছি। সে অনুযায়ী কাজ চলছে আমাদের। আর কয়েকদিন পরেই রাব্বি এবং তারেক চলে যাবে । আবার হয়তো আসবে বেশ কয়েক বছর পর আর তখনই বড় আকারে মিলবো আমরা সবাই ৮৮ ব্যাচের মিলন মেলায়। বৃহৎ পরিসরে হবে আবারো অড্ডা। আমাদের প্রথম আড্ডাতে আসার ইচ্ছা ছিল কিন্তু নানা ঝামেলার কারণে আসতে পারেনি তবে ফোনে কথা বলেছে তারা।

সবার মাঝে উচ্ছাস দেখে আবারও আগামীতে একত্রিত হবার প্রয়াস রয়েছে সবার মাঝে। প্রথম আড্ডায় যারা এসেছিল তাদের মধ্যে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিল আমদের ফাস্ট বয় আ ন ম কায়সার জিলানী জুয়েল, রাব্বির হাসান রাব্বি, মুন্সি তারিকুল করিম তারেক, কবি ইকবাল রাশেদীন তরুণ, খন্দকার মাহাবুবুর রহমান তারেক, হাবিবুর রহমান শরীফ,মোস্তফা জামান, আরিফ ইসলাম প্রমুখ।

লেখক
আরিফ ইসলাম, সম্পাদক, আমার ফরিদপুর.কম

সম্পাদনা
হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি