স্পেনের সেগোভিয়ার চত্বরে সায়িক সিদ্দিকীর ‘রূপচান সুন্দরী’

গত ১৪ থেকে ২২ জুলাই স্পেনের সেগোভিয়া শহরে হয়ে গেল ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) ৩৫তম কংগ্রেস। সেখানেই তরুণ নাট্যকর্মী (ইয়াং প্র্যাকটিশনার্স) হিসেবে আমন্ত্রণ পান ময়মনসিংহের অন্বেষা থিয়েটারের সায়িক সিদ্দিকী। পেশায় চাকরিজীবী হলেও মনপ্রাণ দিয়েছেন পালাগানে।

স্পেনের সেগোভিয়ার সবুজ চত্বরে সবুজ ঘাগরায় বর্ণিল পোশাকে সেখানে হাজির বাংলার রূপচান সুন্দরী। তরুণ নাট্যকর্মী সায়িক সিদ্দিকী শুরু করেন পালাগান। মুহূর্তেই যেন সেগোভিয়ার সবুজ চত্বর হয়ে ওঠে সবুজ বাংলা। রূপচান সুন্দরী হয়ে যান নানা প্রান্ত থেকে আসা নাট্যকর্মীদের পরিচিত একজন। পরিবেশনায় যুক্ত হয়ে যান বিদেশি নাট্যকর্মীরাও।

সায়িকের ভাষায়, ‘আমার পালাগানটির মধ্যে বিয়ের একটা জায়গা আছে। যেখানে কনের বিভিন্ন সখী থাকে। রূপচান সুন্দরীর বিয়ের সময় তাকে বিদায় দিতে সখীরা আসে। সেখানে শ্রীলঙ্কা, আমেরিকা, ফ্রান্স, ভারত, সুইজারল্যান্ডের নাট্যকর্মীদের আমি সখী হিসেবে নিয়ে নিই। একপর্যায়ে ওরা আমার পরিবেশনার মধ্যেই দর্শকদের মিষ্টি খাওয়াতে শুরু করে। বাংলাদেশের ঐতিহ্য আরকি। আমরা যে হোটেলে ছিলাম, ওখান থেকে ম্যানেজারকে বলে কিছু চিনি নিয়ে নিই। পরিবেশনার মধ্যে দেখি অন্য দেশের দুইটা মেয়ে গিয়ে দর্শকদের চিনি খাওয়াচ্ছে।’

কথা ছিল পরিবেশনায় সময় দেওয়া হবে মাত্র ১৫ মিনিট। কিন্তু পালা দেখে মুগ্ধ হন আয়োজকেরা। বাড়িয়ে দেওয়া হয় সময়। সায়িকের ভাষায়, ‘সবাই ১৫ মিনিট করলেও আমার সুযোগ হয় ৪০ মিনিট করার।’ সে পরিবেশনায় মুগ্ধ হন সবাই। বাংলাদেশ থেকে কংগ্রেসে অংশগ্রহণ করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। বললেন, ‘আমাদের সায়িক সিদ্দিকী পালাগানের ওপর পার্ফরম্যান্স দেখিয়েছে। সেখানে পরিবেশনাটি খুব প্রশংসিত হয়েছে।’

প্রতি কংগ্রেসেই একজন তরুণ নাট্যকর্মীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সায়িক সিদ্দিকীকে পছন্দ করার কারণ হিসেবে বিশ্ব আইটিআইয়ের সভাপতি রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘ওর একটা পালা দেখেছিলাম। দেখে আমাদের মনে হয়েছিল, ও খুব প্রতিভাবান। সে জন্য ওকে আমরা পছন্দ করি। সব সময় তো ঢাকার লোক যায়, এবার ঢাকার বাইরে একজনকে সিলেক্ট করলাম।’ কংগ্রেসে ৬০টি দেশের তিনশরও বেশি নাট্যকর্মী অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ১১তম বারের মতো ওয়ার্ল্ড অব থিয়েটার বইটি প্রকাশ করেছে। কংগ্রেসে বইটি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করা হয়। নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য গর্বের একটি বিষয়।’

এবারের কংগ্রেসে বাংলাদেশ থেকে আরও অংশগ্রহণ করেছেন আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ, শিমূল ইউসুফ, ইসরাফিল শাহীন, আব্দুস সেলিম, ঝুনা চৌধুরী, আহমেদ ইকবাল হায়দার, হুমায়ুন কবির, বাবুল বিশ্বাস, সাধনা আহমেদ, আইরিন পারভিন, শাহমান মৈশান, এশা ইউসুফ ও মেহেদী তানজীর।