আলমগীর পরিচালিত সিনেমায় গাইলেন আঁখি আলমগীর, সুরকার রুনা লায়লা!
উপমহাদেশের বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী রুনা লায়লা। দীর্ঘ ৫২ বছরের পথচলায় তিনি চলচ্চিত্রে এবং মঞ্চে সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে আজো গেয়ে চলেছেন। দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনের পথচলায় এবারই প্রথম রুনা লায়লা কোনো গানের সুর করেছেন। আর এই গানটি আলমগীর পরিচালিত সিনেমায় গাইবেন আঁখি আলমগীর।
প্রখ্যাত গায়িকা রুনা লায়লা এবার নিজের সুর সৃষ্টির পাশাপাশি সংগীত পরিচালনার কাজও করলেন। রুনার সুর করা গানটির কথা লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। আর এতে কণ্ঠ দিয়েছেন আঁখি আলমগীর। আলমগীর পরিচালিত ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিতে গানটি ব্যবহৃত হবে। এরইমধ্যে গানটির রেকর্ডিং সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান রুনা লায়লা। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে শুটিং শুরু হচ্ছে আলমগীর পরিচালিত একটি সিনেমার গল্প ছবির।
রুনা লায়লা বলেন – ‘একদিন আড্ডায় আঁখি আমাকে বলেছিল, “আপনি এত গান গেয়েছেন, কিন্তু সুর করেন না কেন? আপনি একটা গানের সুর করেন, আমি গাইব।” সুর সৃষ্টি খুব কঠিন ব্যাপার। আমি কোনো দিন তা করিনি। আমার একটা ভয়ও ছিল। তারপরও বলেছিলাম, আচ্ছা দেখি চেষ্টা করব।একদিন মুখটা করলাম, তারপর আলমগীর সাহেবকে শোনালাম। প্রথমে কিছু বলেনি। কদিন পরে এসে বলল, “অন্তরাটা করেছ?” আমি বললাম না, অন্তরা তো করিনি। তুমি তো কিছু বলোনি। আলমগীর সাহেবের আগ্রহ দেখে তখন সেখানেই বসে অন্তরাটা তৈরি করে ফোনে রেকর্ডও নিলাম। শোনানোর পর বলল, “সুরটা তো খুবই ভালো হয়েছে।” তবে আলমগীরের কাছে আমার শর্ত ছিলো একটাই, তা হলো অ্যাকুস্টিক ইন্সট্রুম্যান্ট দিয়েই গানের পুরো কাজ শেষ করতে হবে এবং তাই হয়েছে।’
অভিনেতা আলমগীর বলেন, ‘হঠাৎ করেই পুরো ব্যাপারটা ঘটেছে। ৫২ বছর ধরে রুনা গাইছে, এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। শুধু বলব, এটা অনেক বড় একটা অর্জন। এই গানটি ঋতুপর্ণার লিপে যাবে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর থেকে বিএফডিসিতে উত্তম গুহের তৈরি সেটে চলচ্চিত্রটির শুটিং শুরু হবে।’

আঁখির গান গাওয়া সম্পর্কে রুনা বলেন, ‘সাধারণত আঁখি যে ধরনের গান গেয়ে অভ্যস্ত, তা থেকে নতুন গানটি একদমই অন্য রকম। গানটি গাইবার আগে আঁখি ভীষণ ভয়ে ছিলো। কিন্তু তার ভেতর আমি আত্মবিশ্বাসটা দেখেছি। গানটি যেহেতু ক্ল্যাসিক্যাল। তাই আঁখি খুউব কষ্ট করেছে গানটির চুড়ান্ত রেকর্ডিং-এর পূর্ব পর্যন্ত এবং শেষ পর্যন্ত আঁখি অসাধারণ গেয়েছে। আমার মনে হয় এই গানটি একটি মাইলস্টোন গান হবে। আমার সঙ্গে পাঁচ দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহড়া করেছে। যা বলেছি তা মেনেছে। আমি তাকে বলেছিলাম, এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নাও, সে নিয়েছেও তাই।’
এই গান তৈরির পেছনে রুনা লায়লাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন সংগীত পরিচালক ইমন সাহা। রুনা বলেন, ‘আমি কোনো দিন ভাবতেও পারিনি গানের সুর করতে পারব। আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে ইমন।’ গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘আমি অত্যন্ত মুগ্ধ। কারণ, উপমহাদেশে তিনি সবার কাছে প্রিয় শিল্পী। তাঁর এই প্রতিভা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তিনি যখন হঠাৎ করে সুরটা আওড়াচ্ছিলেন, তখন সেটার ওপরই আমাকে গানটা লিখতে হয়েছিল।’
‘গল্প কথার ওই কল্পলোকে জানি, একদিন চলে যাব, কোথায় শুরু আর শেষ হবে কোথায়, সে কথা বলে যাব’
এমন কথার গানটিতে কণ্ঠ দিতে পেরে ভীষণ উচ্ছ্বসিত আঁখি আলমগীর। তাঁর কথায়, ‘এই গানের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের অংশ হতে পেরেছি। এই গানের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরা সবাই একেকজন কিংবদন্তি। দুই মাসের প্রস্তুতিতে এই গানটি করেছি। গান গাওয়ার আগের পুরো দুই মাস যেখানেই সময় পেতাম গানটি গাইতাম। রুনা আন্টির কাছ থেকেও ভীষণ সাপোর্ট পেয়েছি। তিনি আমাকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করেছেন। তবে যেহেতু উচ্চাঙ্গসঙ্গীত আমার জানা, তাই আত্মবিশ্বাস ছিলো যে, আমি সঠিকভাবে গাইতে পারবো। রুনা আন্টি আমাকে এই গানের জন্য যে সব টেকনিক শিখিয়েছেন, তাতে আমার গানের ধারাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। গানটির রেকর্ডিং শেষে তিনি যখন আমাকে জড়িয়ে ধরেন তখন বাবা, আমি আর আন্টি কাঁদছিলাম। আর এটাই ছিলো আমার এ গানের জন্য বড় প্রাপ্তি।’
উল্লেখ্য, চলচ্চিত্রের কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্য আলমগীরের। তার নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা ‘আইকন এন্টারটেইনম্যান্ট’র ব্যানারে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হবে।