বন্ধ হচ্ছে সরকারি কাজে ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহার

সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ইচ্ছেমতো ই-মেইল ব্যবহারে বিধি নিষেধ আসছে। ইলেকট্রনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে তাদেরকে একটি অভিন্ন নীতিমালার আওতায় আনা হচ্ছে। এটি চূড়ান্ত হলে সরকারি কোনো কাজে আর ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহার করা যাবে না।

সরকারি কার্যক্রমের গোপনীয়তা রক্ষা, অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও সাইবার নিরাপত্তার জন্য ই-মেইল ব্যবহারের এ নীতিমালা করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ই-মেইল ব্যবহারকে সুনির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে আনতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নীতিমালার খসড়ায় একটি অভিন্ন ডোমেইন ‘ডট বিডি’র ঠিকানা যুক্ত ই-মেইল ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নীতিমালাটি চূড়ান্ত হলে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার নাম বা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদ বা নামের শেষে ডট বিডি ঠিকানার মেইল আদান-প্রদান করতে হবে। এসব মেইল শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজে যোগাযোগে ব্যবহার করতে পারবেন তারা। ইতোমধ্যে নীতিমালার খসড়া তৈরি করে সংশ্লিষ্টদের মতামতের জন্য তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। খসড়া নীতিমালা সম্পর্কে জনসাধারণ, সরকারের নীতি নির্ধারকসহ মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মতামতের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। সবার মতামত পাওয়ার পর সেগুলো যাচাই-বাছাই করে নীতিমালায় সংযোজন-বিয়োজন করে খসড়া চূড়ান্ত করবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। এরপর সেটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে মন্ত্রীসভায় । তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের উপ-সচিব (পলিসি শাখা) ড. মো. ফজলুর রহমান বলেন, নীতিমালাটির প্রথম খসড়া ওয়েবসাইটে দেওয়ার পর অনেকে মতামত এসেছে। সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বেশকিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে খসড়া-২ হিসেবে সেটি আবারও আপলোড করা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা জানান, আবারও মতামত পেলে খসড়াটি চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করবে সংশ্লিষ্ট কমিটি। পরে কমিটির মতামতের ভিত্তিতে এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সিদ্ধান্তে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। কবে নাগাদ চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হতে পারে সে সম্পর্কে কিছু বলেননি তিনি।

সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা সংস্থাগুলোকে অভিন্ন ডোমেইনে ইমেইল সেবা দেবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। এক্ষেত্রে বিসিসি ইমেইল সার্ভিস প্রোভাইডার (ইএসপি) হিসেবে কাজ করবে। খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী দুটি করে ই-মেইল আইডি খুলতে পারবেন। সেক্ষেত্রে একটি হবে তার পদবি দিয়ে এবং অন্যটি নাম দিয়ে। তবে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও আইডি দুটি দুই ধরনের কাজে ব্যবহার করতে হবে তাদের। আবার যেসব কর্মকর্তারা অবসরে যাবেন বা চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হবে, তারা পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত [email protected] মেইল সরকারি যোগাযোগে ব্যবহার করতে পারবেন। এক বছর পর তাদের থেকে ওই আইডি ও পার্সওয়ার্ড বাজেয়াপ্ত করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় ধাপে দেওয়া খসড়া ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী বেসরকারি কোনো সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য কোনো ওয়েবসাইটে ওই ই-মেইল ঠিকানা ব্যবহার করতে পারবেন না। ফজলুর রহমান বলেন, ই-মেইল ব্যবহার নীতিমালায় যেসব বলা হয়েছে তা অবশ্যই মানতে হবে। যদি কেউ এর ব্যত্যয় ঘটান তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। তবে খসড়া নীতিমালায় জাতীয় নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত সংস্থা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনকে এর বাইরে রাখা হয়েছে।

এসব স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান ই-মেইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের কর্তৃপক্ষের নিয়মে পরিচালিত হবে। নীতিমালার যৌক্তিকতা বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার নিজস্ব ডোমেইনের অধীনে ই-মেইল সেবা চালু থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনও অফিসিয়াল যোগাযোগের জন্য জিমেইল, ইয়াহু বা আউটলুকের ই-মেইল ব্যবহার করেন। এ ছাড়াও সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ই-মেইল ব্যবহারের অভিন্নতা এবং নির্দেশনার অভাব রয়েছে। এসব সমস্যা কমাতে এবং প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ই-মেইল ব্যবহারকারীদের একই নিয়মের অধীনে আনতে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে খসড়ার ভূমিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। দেখভাল করবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সরকারি মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোতে নির্দিষ্ট ডোমেইনের অধীনে ই-মেইলের এমন সেবা দেবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অধীন বিসিসি। তবে যেসব মন্ত্রণালয় বা সংস্থার নিজস্ব আইটি অবকাঠামো আছে সেগুলো নিজেদের ই-মেইল সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। খসড়া নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, পুরো নীতিমালা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন দেখভাল করবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য দিক কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের পাসওয়ার্ড অন্য কাউকে জানাতে পারবেন না।

মেইলে হিংসাত্মক, আক্রমণাত্মক, ধর্মীয় উষ্কানীমূলক, পর্নোগ্রাফি বিষয়ক কনটেন্ট আসলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। অটো সেভ পাসওয়ার্ড ফিচার ব্যবহার করা যাবে না। নিরাপত্তা বজায় রাখতে ব্যবহারকারীকে ছয় মাসে অন্তত একবার পাসওয়ার্ড বদলাতে হবে। ড. ফজলুর রহমান বলেন, এ বিষয়ক কমিটি চাইছে ই-মেইল ব্যবহারে খুব সহজ-সরল কিন্তু কার্যকরী নীতিমালা তৈরি করতে। সবার মতামত পেলে তা আরও সমৃদ্ধ ও যুগোপযোগী হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।