নওগাঁর সাপাহারে দুই স্কুল ছাত্র নিখোঁজ

নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় দুই স্কুল ছাত্র নিখোঁজ হয়েছে। গত শুক্রবার উপজেলার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ওই দুই শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকেই ওই দুই কিশোর নিখোঁজ। এ ঘটনায় নিখোঁজ দুই স্কুল ছাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে সাপাহার থানায় পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

নিখোঁজ দ্ইু স্কুল ছাত্র হলো, সাপাহার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজেদুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম অনুপম (১৬) ও তাঁর বন্ধু মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জালাল উদ্দীনের ছেলে নাইমুর রহমান দুর্জয় (১৬)। তাঁরা দুজনেই পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাঁরা দুজন পরস্পরের খুব ভালো বন্ধু। পুলিশ ও নিখেঁ^াজ দুই কিশোরের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে আহসানুল আলম অনুপম তার প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। একই সময় অনুপমের বন্ধু নাইমুর রহমান দুর্জয় নওগাঁ শহরে তার খালার বাড়িতে ছোট বোনকে দেখতে যাবে বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকেই তাদের দুজনের কোনো খোঁজ পাচ্ছে না স্বজনেরা। তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোন দুটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় থানায় পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

অনুপমের বাবা সাজেদুল আলম বলেন, ‘অনুপম ছেলে প্রাইভেট পড়তে শিক্ষকের বাসায় যাওয়ার কথা বলে শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়। দুপুরের পরেও বাড়ি না ফেরায় তার খোঁজ নিতে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, সে তার বন্ধু দুর্জয়ের সঙ্গে নওগাঁতে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছে। কিন্তু দুর্জয়ের বাবা নওগাঁতে খোঁজ নিয়ে যখন জানতে পারে, তারা দুজন নওগাঁয় আত্মীয়ের বাড়িতে যাইনি, তখন থেকে আমাদের দুঃশ্চিন্তা বেড়ে যায়। এরপর বিভিন্ন জায়গায় হন্যে হয়ে খোঁজ নিতে থাকি। কিন্তু কোথাও তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল দুটি বন্ধ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ভয় হচ্ছে, আমার ছেলে জঙ্গিবাদ বা অন্য চরমপন্থী কোনো আদর্শে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে কি না। তার যে আচার-আচারণ তাতে এখন শঙ্কা জাগছে। সে এ ধরণের কাজ করলেও করতে পারে। বার বলা সত্ত্বেও সে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে যুক্ত হতে চাইত না। দুর্জয় ছাড়া অন্য কোনো সহপাঠী কিংবা প্রতিবেশিদের সঙ্গে সে খুব একটা মিশতো না।
দুর্জয়ের বাবা জালাল উদ্দিন বলেন, ‘দুর্জয় নওগাঁয় তাঁর খালার বাসায় ছোট বোনকে দেখতে যাবে বলে শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু দুপুরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সে খালার বাড়িতে যাইনি। এখন আমার ছেলে ও অনুপমের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।’ তিনি জানান, তাঁর ছেলে চতুর্থ শ্রেণি থেকে নিয়মিত নামজ পড়তো। লেখাপড়ায় সে খুব ভালো। পিইসি ও জেএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এবং ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। ওই দুই কিশোরের পরিবার, সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দুজনেই খুব মেধাবী ছাত্র। দুজনেই জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। দুজনেই খুব ভদ্র এবং ন¤্র স্বভাবের। দুজনেই পাঁচ ওয়াক্ত নামজ পড়ত। সব সময় দুজন একসঙ্গে চলাফেরা করত। অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে তারা খুব একটা মিশতো না। হঠাৎ কি জন্য তারা দুজন নিখোঁজ হলো তার কোনো কারণ কেউ বলতে পারছে না।

সাপাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুল আলম শাহ্ জানায়, দুই কিশোর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। তাদের উদ্ধারে সব ধরণের বিষয় মাথায় রেখে অনুসন্ধান চলছে।

 

এ.কে.সাজু, নওগাঁ প্রতিনিধি